Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০২০
সর্বশেষ সংষ্করণ 2020-09-05T16:04:52Z
সারাদেশ

মাটির গর্ত দু'টিই যেন তার হুইলচেয়ার

বিজ্ঞাপন


জি ভয়েস ডেস্কঃ রান্না ও গোসলসহ অন্যান্য কাজের সময় প্রতিবন্ধী শিশুটিকে ছোট একটি গর্তে রেখে যান দাদি শহর বানু। কারণ শিশুটি একা বসে থাকতে পারেনা। বিছানায় শোবার সময়ও তাকে ধরে রাখতে হয়। তা না হলে বিছানা থেকে সে পড়ে যায়। ঘরের ভেতর গর্তে প্রতিবন্ধী নাতিকে রেখে দাদি শহর বানু রান্নাবান্নাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করেন। ভিক্ষা করে জীবন যাপন করেন দাদি শহরবানু। বাঁশের ছোট ভাঙা ঘরে প্রতিবন্ধী নাতিকে নিয়ে থাকেন শহর বানু। মা–বাবার কাছে আশ্রয় মেলেনি প্রতিবন্ধী এই শিশুটির । দরিদ্র বিধবা দাদিই এখন তাঁর একমাত্র সহায়। তবে যে উপায়ে দাদি তাকে বাঁচিয়ে রাখছেন, সে উপায়টি মোটেও সম্মানজনক নয়। দাদি ভিক্ষা করে দুজনের খাবারের ব্যবস্থা করেন। তিন বছর ধরে এভাবেই দিন চলছে দাদি–নাতির। এখন দাদির ওপরও ক্লান্তি এসে ভর করেছে।

বলছি শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী শিশু মো. আসাদুল’র কথা। তার বয়স সাত বছর। সে শারীরিক, বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। সে দিনমজুর মো. রুবেলের ছেলে। আসাদুলের বয়স যখন চার বছর, তখন তার মা রাশেদা বেগম ঢাকার এক বাসায় ছেলেকে রেখে চলে যান। তিনি আর ছেলের খোঁজ করেননি। পরে আসাদুলের চাচি নুরেছা বেগমের সহযোগিতায় শিশুটিকে ঢাকা থেকে নকলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। রুবেল তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে মা শহর বানুর (৫৭) কাছে রেখে যান। সেই থেকে আসাদুল দাদি শহর বানুর কাছে থাকে। নাতি ও নিজের জীবনযাপনের জন্য তাঁকে নির্ভর করতে হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তির ওপর।

দাদি শহর বানু কেঁদে কেঁদে বলেন, জন্ম থেইক্কাই আমার নাতি আসাদুলের সমস্যা। খাড়োবার পাইনা (দাঁডাতে) ও কতা (কথা) কবার পায় না। নাতিনরে নিয়া ভিক্ষা কইরা যা পাই, তা দিয়াই চালাই। নিজের শইল (শরীর) ভালা না। তাই নাতিরে কাহো (কোলে) নিয়া ভিক্ষা করতে খুব কষ্ট লাগে। সরকার থেইক্কা আমার আর নাতির নামে দুইটা কার্ড (বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা) কইরা দিলে, নাতির জন্য একটা হুইলচেয়ার দিলে অনেক উপকার অইতো (হতো)। আসাদুলের বাবা ঢাকায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। স্ত্রী রাশেদার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। শহর বানু রামপুর এলাকায় তাঁর বাবার সামান্য জমিতে তৈরি একটি ছোট বাশেরঁ ঘরে নাতি আসাদুলকে নিয়ে থাকেন। শহর বানু নিজেও অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরে কোমরের ব্যথায় ভুগছেন। তারপরও প্রতিবন্ধী নাতিকে কোলে নিয়ে সারা দিন ভিক্ষা করেন। দুপুরে যদি কারও বাড়িতে খাবার পান তাহলে খেয়ে নেন,সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে রান্না করে নিজে খান এবং নাতিকে খাওয়ান।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার জন্য সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তাঁদের নাম তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। আবেদন পেলে ওই বিধবা নারী ও প্রতিবন্ধী শিশুটির জন্য বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়ার জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ