Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২০
সর্বশেষ সংষ্করণ 2020-10-22T16:08:24Z
সিলেট

রায়হান হত্যার ১১ দিন, ধরাছোঁয়ার বাইরে আকবর হোসেন ভূঁইয়া

বিজ্ঞাপন

জিভয়েস২৪ ডেস্ক:  সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যুর ১১ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করতে পরেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মামলাটির বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’র (পিবিআই)। এ পর্যন্ত বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া পুলিশের অপর তিন সদস্যদের মধ্যে কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতারও দেখানো হয়নি।

মঙ্গলবার টিটুকে গ্রেফতারের পর ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। এই ঘটনার পরই বৃহষ্পতিবার এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবারয়াকে বদলি করা হয়েছে।

জানা যায়, এস আই আকবর ভূঁইয়াকে পালাতে সহযোগীতা করায় বুধবার ওই ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ এসআই হাসান উদ্দিনকে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য ইতোমধ্যে কাষ্টঘর এলাকার সুইপার কলোনির সুলাই লালসহ দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আর মূল হোতা এসআই আকবরসহ জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে উত্তাল রয়েছে সিলেট।

এদিকে বুধবার দুপুরে শেষ হয়েছে রায়হানের পরিবার ও বৃহত্তর আখালিয়াবাসীর দেওয়া ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম। তবে একই দাবিতে পুনরায় তিনদিনের নতুন কর্মসূচী দিয়েছে নিহত রায়হানের পরিবার। আকবরসহ হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় না আসায় ক্ষোভ রয়েছে জনমেন।

পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মো.খালেদুজ্জামান জানান, তদন্তকালে যাদের না পাওয়া যাবে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মামলাটি স্পর্শকাতর, তাই সব বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ প্রয়োজন। সেজন্য পিবিআই’র এর তদন্ত দল নানা বিষয় মাথায় রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

রায়হান হত্যার ঘটনার পর থেকে পুলিশ লাইন্সে অভিযুক্ত ৬ পুলিশের পাহারায় রয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের।

তিনি বলেন, ‘হত্যা মামলাটির পুরো বিষয় তদন্ত করছে পিবিআই। আর তাদের সহযোগিতা করছে পুলিশ। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া পলাতক রয়েছেন। পুলিশ তাকে খুঁচ্ছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এছাড়া সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে এসআই আকবর যেন দেশ ছাড়তে না পারে, সেজন্য পুলিশের নজরদারি রয়েছে।’

পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার (১২ অক্টোবর) বেলা ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত আকবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতেই অবস্থান করছিলেন। তখন পর্যন্ত তাকে বেশ চিন্তিত দেখা গেছে। এরপরই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান তিনি। আকবর তার নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট এবং সরকারি সেট দুটোই ফাঁড়িতে রেখে গায়েব হয়ে যান। গা ঢাকা দিয়ে কোথায় আছেন, সেই হদিস কেউ দিতে পারছেন না। তার আগে সে খুনের সব আলামত নষ্ট করে দেয়। তবে ফাঁড়ির ইনচার্জ গা ঢাকা দিলেও অভিযুক্ত অন্য সদস্যদের পুলিশ লাইন্সে রাখা হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশের হেফাজতে থেকে পুলিশ সদস্যের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা নাটকের একটি অংশ। এখন দেখুন, নিরাপত্তা কোথায় রয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পক্ষপাতিত্ব আচরণ করেছেন পুলিশেরই সঙ্গেই। বরখাস্ত ও প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যদের পুলিশ লাইন্সে নিরাপত্তা দিয়ে রাখা হলেও এসআই আকবরকে তারাই পালাতে সুযোগ করে দিয়েছেন। এটা পুলিশের ব্যর্থতা ও উদাসীনতার অংশ।’

এদিকে, ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পর তিন দিনের ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রায়হানের পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও এলাকার মুরুব্বিয়ান বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরস্থ পিবিআই কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় তাদের রায়হান হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার আশ্বাস প্রদান করেন সিলেট পিবিআই’র এসপি খালেকুজ্জামান।

পিবিআই কার্যালয় থেকে বেরিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান সাংবাদিকদের বলেন, যদিও তদন্তকাজে ধীরগতি রয়েছে, তবু তাদের কাজ আমাদের কাছে পজিটিভ। কারণ- পিবিআই’র হাতে তদন্তভার যাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। এতে আমরা আশাবাদি।

তিনি বলেন, সাক্ষাৎকালে এসপি খালেকুজ্জামান আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে এবং সময় দিতে বলেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেছেন, রায়হানের করুণ মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত সবাই শাস্তির আওতায় আসবে। তাঁর এই কথায় আমরাও আশা রাখছি, এস.আই আকবর গ্রেফতারসহ সকল দোষী ব্যক্তিকে দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

উল্লেখ্য-গত ১১ অক্টোবর ভোরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন রায়হান আহমদ (৩৪) নামের এক যুবক। পরে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে তিনি মারা যান। রায়হান সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করতেন।

এই ঘটনায় ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হেফাজতে মৃত্যু আইনে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী।

এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। এই তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটুচন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়।

স্ত্রীর দায়ের করা মামলাটির তদন্ত করছে পিবিআই। মামলার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর পলাতক রয়েছেন বলে দাবি পুলিশের।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ