Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২
সর্বশেষ সংষ্করণ 2022-04-12T21:25:05Z
গোলাপগঞ্জলিড নিউজ

নেকাব ইস্যুতে ৩ সপ্তাহ এলাকাছাড়া গোলাপগঞ্জের শিক্ষক !

বিজ্ঞাপন
ছবি : অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র দাস।

ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটের গোলাপগঞ্জে গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে এক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ক্লাসে এক ছাত্রীকে নেকাব খুলতে বাধ্য করার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটি পরে ‘ভুল-বোঝাবুঝি’ বলে ওই ছাত্রীর বাবা জানালেও স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে পরিবার নিয়ে এলাকাছাড়া হন ওই শিক্ষক। এখনও তিনি ফিরতে পারেননি এলাকায়। 

গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে গত ১৫ মার্চ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে কথিত নেকাব অবমাননার অভিযোগ ওঠে। 

বিষয়টি গোলাপগঞ্জের ভেতরে এতদিন সীমাবদ্ধ থাকলেও মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের ঘটনার পর সিলেটজুড়ে আলোচিত হচ্ছে সুনীলের এলাকা ছাড়ার ঘটনা। 

সুনীলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে স্কুলের গভর্নিং বডি ও উপজেলা প্রশাসন দুটি তদন্ত কমিটি করে। এর মধ্যে গভর্নিং বডির কমিটি রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেদিনই কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসনের কমিটি। 

  • ঘটনার শুরু যেভাবে 

ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ১৯৯৫ সাল থেকে শিক্ষকতা করছেন সুনীল চন্দ্র দাস। ২০০৯ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ে কলেজ শাখা চালুর পর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে আছেন তিনি। 

করোনার ছুটি শেষে গত ১৫ মার্চ নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস শুরু হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ক্ষতি পোষাতে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। ১৫ মার্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক আমিন উদ্দিন অনুপস্থিত থাকায় ক্লাস নিতে যান অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র দাস। 

ওই ক্লাসেরই এক ছাত্রী তার বিরুদ্ধে নেকাব খুলতে বাধ্য করার অভিযোগ তোলে। 

ওই ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রোববার কথা হয়। তারা জানায়, সেদিন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অক্সিজেনের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য বুকভরে শ্বাস নিতে বলেন সুনীল চন্দ্র দাস। তবে নেকাব খুলতে ওই ছাত্রী আপত্তি জানায়। সুনীল তাকে কয়েকবার অনুরোধ করলে ওই ছাত্রী নেকাব খোলে। 

পরে বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাকে জানায় মেয়েটি। মা মোবাইল ফোনে বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতিকে অভিযোগ করেন। অন্যদিকে তার বাবা আব্দুল হালিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে মেয়ের সঙ্গে শিক্ষকের এই আচরণের বিচার চান।
 
  • ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ 

ওই ছাত্রীর বাবার ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর এলাকার অনেকে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লিখতে থাকেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বোরকা ও হিজাব নিয়ে কটূক্তি এবং ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগ তোলা হয় বিভিন্ন স্ট্যাটাসে। ফেসবুকের মাধ্যমে এলাকায় ছড়ায় ক্ষোভ। 

সে রাতেই ওই ছাত্রীর বাসায় যান অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র দাস। আরও কয়েকজন শিক্ষক এবং গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্যও তার সঙ্গে যান। মেয়ের বাবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বিষয়টি মিটমাট করে নেন। 

এরপর স্কুলছাত্রীর বাবা ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ফেসবুকে আমার মেয়ে ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে নিয়ে সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভ্রান্ত কিছু লেখালেখি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। শ্রেণিকক্ষে সব ছাত্রছাত্রীর করোনার মাস্ক ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়। এখানে আমার মেয়ের হিজাব খোলার বিষয়টি আদৌ সত্য নয়। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানাই।’ 

এর মধ্যে বোরকা ও হিজাবে মুখ ঢাকা আরেকটি মেয়ের ভিডিওবার্তা স্থানীয় কিছু ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে। মেয়েটি নিজেকে ওই ছাত্রীর সহপাঠী দাবি করে। সে জানায়, ওই ক্লাসে সেদিন সুনীল তার বান্ধবীকে নেকাব খুলতে বাধ্য করে। 

ওই ভিডিওর পর এলাকায় ক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে ২০ মার্চ এলাকাবাসীকে নিয়ে কলেজ প্রাঙ্গণে সভা ডাকেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামীম আহমদ। সেখানে বিষয়টি সমাধানের আলোচনা হলেও এলাকাবাসী সুনীল চন্দ্রের শাস্তি দাবি করেন। ওই দিনই আতঙ্কে পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়েন অধ্যক্ষ সুনীল। বিদ্যালয় থেকে ১৫ দিনের ছুটি নেন তিনি। তবে তিন সপ্তাহ পরেও তিনি এলাকায় ফেরেননি। 

  • ‘স্যার শ্বাস নেয়ার জন্য নেকাব খুলতে বলেন’ 

ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। এই শিক্ষার্থীদের (ওল্ড টেন) তিনটি শাখায় ভাগ করে ক্লাস নেয়া হয়। নেকাব নিয়ে সুনীল চন্দ্র দাসের আলাপের ঘটনাটি ঘটে এ শাখায়। ওই ক্লাসে উপস্থিত ছিল অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। 

রোববার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ১০ জনের সঙ্গে কথা হয়েছে। 

ওই ক্লাসের ছাত্রী নুজহাত আহমদ কনিকা বলে, ‘ক্লাসে করোনা ও অক্সিজেন নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে স্যার সবাইকে জোরে শ্বাস নিতে বলেন। এ জন্য সবাইকে মাস্ক ও নেকাব খুলতে বলেন। ওই ছাত্রী খুলতে রাজি না হওয়ায় স্যার বলেন, আমরা শিক্ষকরা তোমাদের মা-বাবার মতো। তোমরা আমাকে বাবার মতো মনে করে নেকাব খুলতে পারো। 

‘স্যার কয়েকবার বলার পর সে নেকাব খোলে। তবে এ সময় সে স্যারকে বলে, আমাদের ইসলামিক বিধানে বাইরের পুরুষের সামনে হিজাব ও নেকাব খোলা নিষেধ।’ 

আরেক শিক্ষার্থী আদিত্য দাস দীপও প্রায় একই ধরনের বর্ণনা দিয়েছে। সে বলে, ‘স্যার তিনবার বলার পর ওই ছাত্রী নিজ থেকেই নেকাব খোলে। এরপর স্যার বোরকা পরে ভালো কাজ ও খারাপ কাজের উদাহরণ দেন এবং কীভাবে সুন্দর করে সালাম দেয়া যায় সেটা নিয়ে বলেন।’ 

মিনহাজ হোসেন নামে আরেক ছাত্র বলে, ‘ওই ছাত্রী শুরুতে নেকাব খুলতে রাজি না হওয়ায় স্যার বলেন, বিজ্ঞান তো প্রমাণ করতে হয়। তুমি যদি নিজে প্রমাণ না করো (গভীর শ্বাস নেয়ার উপকারিতা) তাহলে এটা যে সত্য তা বুঝবে কী করে।’ 

এ বিষয়ে অভিযোগকারী মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও সে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
 
  • ভিডিওর মেয়েটি কে? 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির মেয়ের মুখ ও মাথা ঢাকা ছিল হিজাব ও নেকাবে। ফলে তার পরিচয় জানা যায়নি। ভিডিওবার্তায় মেয়েটি দাবি করেছে, সে ওই স্কুলের ছাত্রী ও এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। 

ওই প্রতিষ্ঠানের একাধিক এসএসসি পরীক্ষার্থী শিক্ষার্থীর কাছে এই মেয়ের পরিচয় জানতে চাইলে তারা জানায় সে আমেনা বেগম হতে পারে। আমেনা বেগমও এসএসসি পরীক্ষার্থী ও পুরোনো দশম শ্রেণির (ওল্ড টেন) সি গ্রুপের ছাত্রী। আর সুনীল চন্দ্রের ঘটনাটি ঘটেছিল এ গ্রুপে। 

তবে আমেনা বেগম জানায়, এই ভিডিওটি তার নয়। ভিডিওর মেয়েকে সে চেনেও না। 

  • ‘তিলকে তাল বানানো হয়েছে’ 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহের উদ্দিন বলেন, ‘তিলকে তাল বানানো হয়েছে। স্যার কোনো কটূক্তি করেননি। 

তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনার দিন স্কুলে ছিলাম। পরে অধ্যক্ষের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বাসায়ও গিয়েছি। যেভাবে ছড়ানো হয়েছে সে রকম ঘটনা না।’‌ 

তাহের উদ্দিন আরও বলেন, ‘প্রিন্সিপাল স্যার ওই মেয়ের বাসায় যাওয়ার পর ওই মেয়ে ও তার পরিবার সব মন থেকে বাদ দিয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে আপসও হয়, কিন্তু এরপরেও একটি গোষ্ঠী ইন্ধন দিয়ে ঘটনাটিকে বড় করেছে। এর সঙ্গে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কিছু লোকও জড়িত আছে।’ 

সহকারী শিক্ষিকা নুরুন্নাহার ঝুমুর বলেন, ‘আমি ঘটনা শোনার পর ওই ক্লাসের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, স্যার খোলা বাতাসে শ্বাস নেয়ার জন্য মাস্ক খুলতে বলেছেন। একজন না খোলায় স্যার তাকে কয়েকবার অনুরোধ করেছেন। স্যার বারবার বলার পর রাগ করে সে খুলছে। 

‘এরপর স্যারকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি শুরু হইছে। তার সঙ্গে অভদ্রতা করা হচ্ছে।’ 

ঝুমুর বলেন, ‘স্যার প্রায় ২৭ বছর ধরে এখানে আছেন। কখনও কোনো কথা ওঠেনি। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বরং সবাই যাতে নামাজ পড়ে সে জন্য স্যার এই প্রতিষ্ঠানে নোটিশ জারি করেছেন। এখন বুড়ো বয়সে এসে কেন স্যার এসব করতে যাবেন?’ 

বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক আমিন উদ্দিনের সেদিন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার কথা ছিল। তিনি না আসায় ওই ক্লাসে যান সুনীল। আমিন অভিযোগকারী ছাত্রীর গৃহশিক্ষকও। 

আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমি স্কুলে সেদিন যাইনি বলে ঘটনা সম্পর্কে জানি না। আমি বাসায় পড়াতে গেলে ওই ছাত্রী আমাকে অভিযোগ করে। আমি বিষয়টি গভর্নিং বডির সভাপতিকে জানাতে বলি।’ 

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ সেলিমুজ্জামান। সুনীল চন্দ্রের অনুপস্থিতিতে তিনিই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে আছেন। 

তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না জানিয়ে সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘সুনীল স্যার ভালো লোক। আমাদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক। বাকিটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। 

‘আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দেয়নি। এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেছে।’ 

অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র দাস ছুটিতে আছেন বলেও জানান তিনি। 

  • সুনীল চন্দ্রের অভিযোগ, ষড়যন্ত্র 

পুরো ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র দাস। 

মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘আমি ক্লাসে করোনা বিষয়ে আলোচনা শুরু করি। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আলোচনা করি। অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নিয়ে কথা বলি। করোনায় অক্সিজেন কতটুকু উপকারী এ নিয়ে বলি। সবাইকে মাস্ক খুলে শ্বাস নিতে বলি।’ 

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অনেকের মাস্ক পরা ছিল। আর কয়েকজন ছাত্রীর মুখে নেকাব ছিল। আমি তাদের মাস্ক ও নেকাব খুলে শ্বাস নিতে বলি। হিজাব নিয়ে কোনো কথাই বলিনি।’ 

সুনীলের দাবি, বিষয়টি পরে বড় করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘১৭/১৮ তারিখে আমি প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি জানতে পারি। আলোচনা শুরু হওয়ার পর ১৮ মার্চ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উভয় পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে মীমাংসাও করে দেন। অভিযোগকারী ছাত্রীর বাবা তার অভিযোগ তুলে নেন। এরপর একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীকে উসকে দেয়। তারা এলাকায় বিক্ষোভ করে। ফেসবুকে নানান বাজে কথা লিখতে থাকে। বেশির ভাগ জামায়াতের লোক এতে জড়িত। আমার প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষকেরও ইন্ধন রয়েছে। পদপদবির জন্য তারা এমনটি করছেন।’ 

নিজের অবস্থান জানাতে অস্বীকার করে সুনীল বলেন, ‘ভয়ে ২০ মার্চ থেকে আমি এলাকা ছাড়া। পরিবারের নিরাপত্তা ও মানসম্মানের কথা ভেবে আমি ছুটি নিয়ে চলে এসেছি।’

  • যা মিলল তদন্তে 

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ৫ সদস্যের একটি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৩ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। 

গভর্নিং বডির তদন্ত কমিটি রোববার তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই কমিটির প্রধান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আহমদ। তিনি রোববার বলেন, ‘ফেসবুকে হাছা-মিছা (সত্য-মিথ্যা) মিলিয়ে পোস্ট করে ঘটনাকে বড় করা হয়েছে। যেগুলো ছড়াইছে তার বেশির ভাগই ভুয়া।’ 

তবে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কিছু বলতে চাননি চেয়ারম্যান। তিনি জানান, তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে, গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে বলবেন। 

তবে এই তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘স্যার ক্লাসে যা বলেছেন তা একজন শিক্ষক হিসেবেই বলেছেন। ইসলামবিদ্বেষী কিছু বলেননি। পরবর্তীতে তা বিকৃত করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষক হিসেবেই তিনি ছাত্রদের বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। তাতে ধর্ম অবমাননার কিছু আমরা পাইনি।’ 

তদন্ত কমিটির ওই সদস্য আরও বলেন, ‘আমরা ওইদিন শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত থাকা দশম শ্রেণির ১০ জন শিক্ষার্থীর বক্তব্য নিয়েছি। সবাই একই ধরনের কথা বলেছে। তারা জানিয়েছে, স্যার ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর কিছু বলেননি। কথা প্রসঙ্গে বিভিন্ন উদাহরণ দিয়েছেন। বোরকা পরেও যে কেউ অপরাধে জড়াতে পারে আর না পরেও ভালো মানুষ হতে পারে এমনটি বলেছেন।’ 

গভর্নিং বডির সভাপতি মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘সুনীল চন্দ্রকে ভালো মানুষ হিসেবেই জানি। একজন সৎ শিক্ষক। ওনার নামে কখনও কোনো অভিযোগ আসেনি। ফলে এখনকার অভিযোগ কতটুকু সত্য তা বলা কঠিন। 

‘আমি ঢাকায় আছি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনও পাইনি। দু-এক দিনের মধ্যে পাব। এরপর আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে সরকারি যেহেতু একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে, আমাদের এই রিপোর্টের অপেক্ষা করতে হবে।’ 

এই ঘটনা তদন্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম কবিরের গঠন করা কমিটির প্রধান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম। 

তদন্তাধীন বিষয়ে মন্তব্য করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত কাজ শুরু করেছি। তদন্ত চলমান আছে। এখন কিছু বলার সুযোগ নাই। তদন্ত শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।’ 

সুনীলের এলাকা ছাড়ার প্রসঙ্গে গভর্নিং বডির সভাপতি বলেন, ‘উনি একজন ভদ্রলোক। তিনি যদি মনে করেন তার নিরাপত্তা হুমকিতে, তাইলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতেই পারেন।’ 

সুনীলের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত। এখন আর কোনো ঝামেলা নেই। কিছু লোক গুজব ছড়াচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।’

সূত্র : সিলেট টুডে টোয়েন্টিফোর 
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ