বিজ্ঞাপন
সামিল হোসেন : দিগন্ত বিস্তৃত শিম গাছের সবুজ শামিয়ানা। দোল খাচ্ছে থোকায় থোকায় বিশেষ জাতের শিম ‘গোয়ালদাদ্দা’। মাঠে, বাড়ির আঙিনা, পুকুরপাড় এমনকি ছাদের উপর সবখানেই শিম আর শিম। এমন দৃশ্যের দেখা মিলে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে। শুধু কৃষক নয়, দেখে পথিকেরও মনজুড়ায়।
পোক্ত হয়ে ওঠা এসব শিম বিক্রি করতে কৃষকরা ক্লান্তিহীন সময় পার করছেন। সাপ্তাহিক বাজারের দিন এলে উপজেলার ভিন্ন ভিন্ন বাজারের রাস্তা-ঘাটসহ আশপাশ ভরে যায় এ জাতের শিমে।
এ শিম শুধু স্থানীয় বাজারেই বিক্র হচ্ছে না, রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। স্থানীয় মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হওয়ায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছে এ জাতে শিম।
বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনা এ জাতের শিম যুগ যুগ ধরে স্থানীয় কৃষকরা চাষ করে আসছেন। কিন্তু প্রতি বছর বাম্পার ফলন হলেও সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পান না কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন লক্ষণাবন্দ, লক্ষীপাশা ও ফুলবাড়ি ইউনিয়নে গোয়ালগাদ্দা শিমের চাষ হয়ে থাকে। কারণ এ জাতের শিমের বীজ উপজেলার তিন ইউনিয়ন ছাড়া অন্য কোনো এলাকায় নিয়ে রোপণ করলে ফলন তেমন ভালো হয় না।
চলতি বছর ৫৫৫ হেক্টর জমিতে ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিম চাষ হয়েছে। আগামী বছর ৬০০ হেক্টর জমিতে ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিমের চাষ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি বছর ৮৫ মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
আরও জানা যায়, বিশ্বের প্রায় ১৩টি দেশে গোলাপগঞ্জের ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিম রপ্তানি হয়ে থাকে। যুক্তরাজ্য, ইতালি, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ শিম রপ্তানি হয়। ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিমের সাথে স্থানীয় তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৪৫০টি পরিবার জড়িত রয়েছে। যাদের বেশিরভাগ পরিবার এ শিমের ওপর নির্ভরশীল। এই শিমের চাষ করে প্রতি মৌসুমে একেকটি পরিবার ৫-৬ লাখ টাকা আয় করে বলে জানা যায়।
বিদেশে রপ্তানির বিষয়ে আলন আহমদ নামের এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি হাটে তিনি এখান থেকে শিম কিনে নিয়ে যান। এরপর তিনি এজেন্সির মাধ্যমে শিম ঢাকায় পাঠান। সেখান থেকে শিমগুলো দেশের বাইরে রপ্তানি হয়।
স্হানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, এ জাতের শীম চাষ করতে লক্ষাধিক টাকা খরচ করলে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা লাভ করা যায় এবং আমরা তা নিজস্ব খরচে চাষ করে থাকি। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাইনা। যদি সরকারিভাবে সহযোগিতা পাই, তাহলে এর উৎপাদন আরও বৃদ্ধি হবে বলে আশাবাদী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাশরেফুল আলম বলেন, চলতি বছর ৫৫৫ হেক্টর জমিতে ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিম চাষ হয়েছে। আগামী বছর ৬০০ হেক্টর জমিতে ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিমের চাষ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি বছর ৮৫ মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমরা সবসময় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করে আসছি। শিমের ফলন বৃদ্ধিতে সরকারিভাবে যাতে তাদেরকে সহযোগিতা করা যায় সেজন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।