Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
সর্বশেষ সংষ্করণ 2023-09-17T19:08:22Z
বিয়ানীবাজারলিড নিউজ

বিয়ানীবাজারে ৭৩ বছর ধরে ঝূকিপূর্ণ ভবনে চলছে ডাকঘরের কার্যক্রম

বিজ্ঞাপন
জরাজীর্ণ বিয়ানীবাজার উপজেলা ডাকঘর পোস্ট অফিস ভবন। ভেতরে ঝুঁকি নিয়ে দাপ্তরিক কাজ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছবি : সংগৃহীত

মিসবাহ উদ্দিন, বিয়ানীবাজার : প্রায় ৭৩ বছর ধরে ঝূকিপূর্ণ ভবনে চলছে বিয়ানীবাজার ডাকঘরের কার্যক্রম। এক সময় ডাকঘর ছিলো লোকে লোকারণ্য বিয়ানীবাজারবাসীর কাছে চিঠি এখন শুধুই গল্পে, স্মৃতিতে, ইতিহাসে। সাধারণ মানুষ এখন আর খুব একটা চিঠি লিখেন না বলে ডাকঘরে এখন ইনভেলাপ (চিঠির খাম), পোস্টকার্ড বিক্রি একেবারেই উঠে গেছে। ইনভেলাপের দাম বাড়লেও কদর একেবারে নেই বললেই চলে।

এখন শুধুমাত্র সরকারি কিছু কাজে এর ব্যবহার হচ্ছে। অথচ একসময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলি করতে দেখলেই পিয়নের কাছে জানতে চাওয়া হতো কোনো চিঠি এসেছে কি-না। চিঠি লেখার জন্যও গ্রামে লোক থাকত। একইভাবে কেউ চিঠি পড়েও দিতেন।

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তির দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে সেই পুরনো ঐতিহ্যবাহী ডাকঘরের “ডাকবক্স”। এখন আর আগের মতো ডাক অফিসে লোকজনের আনাগোনা দেখা যায় না।

চিঠি দিও প্রতিদিন, চিঠি দিও/ নইলে, থাকতে পারব না/ চিঠি দিও’…কিংবা ‘সে আমায় চিঠি দিয়েছে/ সে আমার খবর নিয়েছে…।’ বাংলা সিনেমার গান। এ রকম গান দুই-আড়াই দশক আগেও সিনেমা হলে, ঘরে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় রেডিও, টেপরেকর্ডার অথবা টেলিভিশনে বেজেছে। এ রকম গানের কথাগুলো আবেগ আর ভালোবাসায় নানা রং তৈরি করেছে, মনকে রাঙিয়েছে।

শুধু তরুণ-তরুণীর আকুলতা চিঠিতে জড়ানো ছিল, সে রকম নয়। ওখানে বিষয়-আশয়, সংসারের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখের কত কিছু জমা থাকত। একটি চিঠি কখনো একরাশ আনন্দের উচ্ছ্বাস তৈরি করেছে, কখনো মন খারাপেরও বার্তাবাহক হয়েছে। তবু চিঠির অপেক্ষা ছিল। দূরত্বকে কাছে নিয়ে আসার উপায় ছিল চিঠি। গোটা অক্ষরে, কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা চিঠির কোনো বিকল্প ছিল না। এই সময়টা কত দ্রুতই পাল্টে গেছে। এখন আর চিঠি দিও, চিঠি এসেছে—এই আকুলতা নিয়ে কেউ অপেক্ষায় নেই, উচ্ছ্বাস নেই।

বিয়ানীবাজার পৌরশহরের প্রবীণ মানুষ সৈয়দ আবু কয়ছর এ রকমই বলেন, ছোটবেলায় তিনি বড়দের কাছে চিঠি লেখা শিখতেন। কোনো খবর কোথাও পৌঁছাতে ডাক বিভাগের খামে ভরে সেই চিঠি পোস্ট অফিসের ডাকবাক্সে ফেলে আসতেন। যখন ডাকপিয়ন চিঠি নিয়ে আসতেন, পাড়ার সবাই তাঁকে ঘিরে ধরতেন। একটি চিঠি একটি পরিবারের বর্তমানকে পাল্টে দিয়েছে। কখনো হাসিতে, কখনো বিষাদে।

এই কথাগুলো মূলত একটি ডাকঘরকে ঘিরে। সেই কবে, শত বছর আগে দূরদেশে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে স্থাপিত হয়েছিল বিয়ানীবাজারের প্রধান ডাকঘর। এলাকার অনেকেই এই ডাকঘরের সেবা নিয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে।

বৃষ্টির সময়ে বিয়ানীবাজার ডাকঘর ভবনটির সমস্ত স্থানজুরে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ছবি : সংগৃহীত

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিয়ানীবাজার উপজেলায় এটি প্রথম ডাকঘর। আপনজন, প্রিয়জন কিংবা পরিচিতজনের একটি চিঠি পাওয়ার অপেক্ষায় এক সময় অনেকেরই যাতায়াত ছিল পোস্ট অফিসে। চিঠি ছাড়াও বিদেশ অথবা দেশে আপনজনের কাছে টাকা পাঠাতে একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছিল এটি। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে ই-মেইল, অনলাইন আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবাধে এই পোষ্ট অফিসের গুরুত্ব এখন আর নেই বললেই চলে। তবুও জীবন বীমা, সঞ্চয়পত্রে টাকা জামানত রাখা কিংবা জরুরী কাগজপত্র পাঠাতে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে এই পোষ্ট অফিসের গুরুত্ব অপরিহার্য।

উপরোক্ত কারণগুলোর জন্যই প্রতিদিন গ্রাহকরা কাঙ্খিত সেবা পেতে ছুটে আসেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পোস্ট অফিসে। অথচ সংস্কারের অভাবে বর্তমানে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে পৌরশহরের মধ্যখানে অবস্থিত বিয়ানীবাজার উপজেলা পোস্ট অফিসটি। পাকিস্থান আমলে নির্মিত দুইতলা এই ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন ডাকঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

খসে পড়ছে ভবনের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তার। ছবি : সংগৃহীত

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পোস্ট অফিসের ভিতরে গিয়ে ভবনটির জীর্ণদশা দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবে। কবে নাগাদ এ অফিসের চুনকাম বা কি ধরনের রং করা হয়েছে তা বোঝার কোন উপাই নেই। খসে পড়ছে ভবনের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা, বেরিয়ে পড়েছে রড। দেয়াল ও ছাদের দিকে তাকালে মরিচা ধরা লোহার রডগুলো চোখে পড়ে। বর্তমানে বৃষ্টির সময়ে ভবনটির সমস্ত স্থানজুরে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ভবনের দরজা-জানাজাগুলো নামমাত্র ঠিকে আছে। এসবের ভিতরেই ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে অফিসিয়াল কাজকর্ম চালাচ্ছেন এখানকার ৭জন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। যেকোনো মুহুর্তে ভবনটি ধসে ঘটতে পারে প্রাণহানিসহ বড় কোনো দূর্ঘটনা। ডাকঘর চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, অবহেলা আর অযত্নে ভবনের চারপাশে গড়ে উঠেছে ঝোপঝাড়। ফলে সন্ধ্যা হলেই এখানে জমে উঠে অপরাধী আর মাদকসেবীদের আস্তানা হিসেবে।

নামমাত্র ঠিকে আছে বিয়ানীবাজার ডাকঘরের দরজা-জানাজাগুলো। ছবি : সংগৃহীত

পোস্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাঠ, বেত ও টিনশেড দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল বিয়ানীবাজার উপজেলা অফিস। অফিসের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেলে ১০/১২ বছর পর পাশেই একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে পোস্টাল কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে এই ভবনেই চলছে অফিসের কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংস্কারের ভবনের অবস্থা বেশ নাজুক। ভবনটি দ্রুত সংস্কার না করলে যেকোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা।

এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা পোস্ট মাস্টার হরিমোহন সিংহ বলেন, অনেকদিন ধরেই বিয়ানীবাজার পোস্ট অফিসটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর এর মধ্যেও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছি। ভবনটি সংস্কারের জন্য পোস্ট অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানালেও এখন পর্যন্ত সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ