বিজ্ঞাপন
ডি এইচ মান্না : হাজী জছির আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গোলাপগঞ্জ উপজেলার অন্যতম প্রাচীনতম প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্র সুরমা নদী তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই বিদ্যাপীঠ'টি দেখেছে ব্রিটিশের শাসন, পাকিস্তানের শোষণ আর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দিনগুলো।
সুদূর প্রাচীনকাল থেকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছিল শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রসর কিন্তু কথায় আছে বাতির নিচেই অন্ধকার। উপজেলা সদরের পাশ ঘেঁষা জনবহুল গ্রাম বৃহত্তর স্বরস্বতী এলাকা'টি পিছিয়ে ছিল শিক্ষার হারে । প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ছিলনা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমনকি তৎকালীন সময়ে আশপাশের চার-পাচঁটি গ্রামের মধ্যেও কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না।
সেই প্রেক্ষাপটে গ্রামের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তৎকালীন সময়ের এলাকার মুসলিম ধর্নাঢ্য ব্যক্তিত্ব স্বরস্বতি গ্রামের হাজী জছির আলী ৫৬ শতক ভুমির উপর ১৯২৪ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তার নামানুসারে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে হাজী জছির আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হয় এবং বর্তমান সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠানটির নামের সাথে যুক্ত করা মডেল শব্দটি।
১৯২৪ সাল থেকে খ্যাতনামা এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে মাধ্যমিকে ভর্তি হন বিভিন্ন বিদ্যালয়ে।
যা এবছর পর্যন্ত হিসেব করলে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী তাদের প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শেষ করেছেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে। বিদ্যালয়টি প্রায় প্রতি বছরই স্থানীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার রেকর্ড রয়েছে এবং ২০১৬ সালে সিলেট জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছিল।
সচিবালয় থেকে শুরু করে দেশেবিদেশে স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সাবেক অসংখ্য শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে একাধিক সচিব ছাড়াও অসংখ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জনপ্রতিনিধি, আইনজীবী, ব্যাংকার, সাংবাদিক, শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সাবেক অনেক শিক্ষার্থী।
বর্তমানে ১৩ জন শিক্ষক- শিক্ষিকা'র নিরলস পরিশ্রমে চলছে ৫৬০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান। প্রায় প্রতিবছর শতভাগ পাস তো আছেই, তার পাশাপাশি জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যাটিও ঈর্ষণীয়। পড়াশোনার বাইরেও এখানকার শিশুরা একাডেমিক সিলেবাসের বাইরের অনেক গুণী লেখকদের বই পড়ে, সাধারণ জ্ঞানের চর্চা ও নিয়মিত সৃজনশীল নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় তারা। এ কারণে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ছাড়াও জেলার সেরা বিদ্যালয়ের খেতাব জুটেছে বহু আগেই।
ঐতিহ্যবাহী এই প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী বছর ২০২৪ সালে শতবর্ষ উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উপলক্ষে ২০২৪ সালের ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দু'দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে প্রতিষ্ঠানটি। সাবেক শিক্ষার্থীদের এই পুনর্মিলনী'তে প্রায় ৫০০শত থেকে ১ হাজার প্রাক্তন অংশগ্রহণ করবে বলে ধারণা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের।
খ্যাতনামা এই বিদ্যাপীঠ'টি অতীতের মতো আজও ধরে রেখেছে তার ইতিহাস ঐতিহ্যের সমৃদ্ধতা। এমনইভাবে এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াবে অনন্তকাল এমনই প্রত্যাশা সকলের।