Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫
সর্বশেষ সংষ্করণ 2025-07-02T17:48:50Z
লিড নিউজ সিলেট

সিলেট ডিসির অপসারণ দাবি, না হলে ‘পরিবহন ধর্মঘট’

বিজ্ঞাপন
সিলেট নগরের কোর্ট চত্বরে পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও মেজরটিলা এলাকায় উচ্ছেদের শিকার ব্যবসায়ীদের ডাকা সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক। ছবি : সংগৃহিত

ডেস্ক রিপোর্ট : পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সিলেট জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বুধবার দুপুরে নগরের কোর্ট চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে থেকে এ ঘোষণা দেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। আগামী শুক্রবারের মধ্যে সিলেটের ডিসিকে অপসারণ না করলে শনিবার থেকে সব সড়কে যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন তারা।

পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও মেজরটিলা এলাকায় উচ্ছেদের শিকার ব্যবসায়ীদের ডাকা এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, প্রশাসন একতরফাভাবে ও জিরো টলারেন্স নীতির নামে চালানো অভিযানে শ্রমিক ও মালিকদের বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অভিযান বন্ধ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডাকার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

আন্দোলনকারীদের পাঁচ দফা দাবি হলো-

বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া, ক্র্যাশার মেশিন ধ্বংসের অভিযান বন্ধ করা, পাথর পরিবহনকারী ট্রাক আটক না করা, চালকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং সিলেট জেলা প্রশাসকের অপসারণ।

বিক্ষোভ সমাবেশে সাবেক মেয়র আরিফুল হক বলেন, কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই জেলার বিভিন্ন স্থানে পাথর ভাঙার যন্ত্রের (ক্র্যাশার মেশিন) ব্যবসায়ীদের বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। সময় কিংবা নোটিশ না দিয়ে নগরের মেজরটিলা এলাকায় রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসক এই অঞ্চলের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট করছেন। তাই ভুক্তভোগী বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এক হয়ে প্রতিবাদের পাশাপাশি ডিসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন।

“জেলা প্রশাসক, তুমি কোথাকার কে..? তোমার মতো কয়েকজন জেলা প্রশাসক তো আমার আন্ডারেই কাজ করেছে; কথাবার্তা সাবধান করে বলবা। জনপ্রতিনিধি কে আছেন, কে থাকবে সেটা নির্ধারণ করবে জনগণ, তোমার নির্ধারণ করার কথা না।”

শুক্রবারের মধ্যে জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার না করলে শনিবার থেকে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক।

শ্রমিক ও মালিকদের দাবিগুলোকে ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি করে সাবেক মেয়র বলেন, “বুধবার পাথর সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে সভা ডাকেন জেলা প্রশাসন। তবে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী কিংবা পরিবহন শ্রমিক নেতারা কেউ বৈঠকে যাননি। সবাই ঘৃণাভরে এই বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছেন।

“সরকার যদি দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে সিলেটের অর্থনীতি থমকে যাবে। আমরা পরিবেশের পক্ষে। সেইসঙ্গে ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদেরও ক্ষতি চাই না। তাই পরিবেশ সম্মতভাবে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন।”

সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন আহমদ মাসুকের পরিচালনায় সমাবেশে কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্র-ঋণ বিষয়ক সহসম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, সিলেট জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ময়নুল ইসলাম, জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসম্পাদক মো. আবদুস সালাম এবং জেলা শ্রমিক দলের সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজের অংশ হিসেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তাদের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নেমেছে।

সরকারি কর্মকর্তারা তাদের কাজের অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন; এখন হঠাৎ করে অপসারণ চেয়ে এমন কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টি একেবারেই দুঃখজনক বলে জানান তিনি।

কয়েক দিন ধরে সিলেটের পাথর কোয়ারি ইজারা দিয়ে এবং পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ আবার চালুর দাবিতে পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা কর্মবিরতি, পরিবহন বন্ধ রাখাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে রাজনৈতিক নেতা, পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে বৈঠকে বসেন ডিসি। সেই বৈঠকে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলীসহ পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

১৪ জুন জাফলংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িবহর আটকে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ হয়।

দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় নয়জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এরপর কিছু ক্র্যাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার খুলে নেওয়া হয়।

এরপর পাথর কোয়ারিগুলো ফের ইজারার মাধ্যমে খুলে দেওয়ার দাবিতে ২৪ জুন সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করে সিলেট জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তাদের এই দাবির সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতারা।

এ সময় ঐক্য পরিষদের নেতারা ২৮ জুন থেকে সিলেটের সব পাথর কোয়ারি থেকে ৪৮ ঘণ্টা লোড-আনলোডে কর্মবিরতি, ৩০ জুন থেকে সিলেট জেলা সব পণ্য পরিবহনে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি এবং ২ জুলাই থেকে সিলেট জেলায় সব পণ্য পরিবহণ ও গণপরিবহনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এর মধ্যে মঙ্গলবার পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে কর্মসূচি চলার মধ্যেই সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পর্যটকবাহী কয়েকটি গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।

সৌজন্যে : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর


বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ