Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সর্বশেষ সংষ্করণ 2022-04-22T13:04:12Z
জানা-অজানা

৪০ বছর ধরে কাকের দখলে মৌলভীবাজারের যে বাড়ি !

বিজ্ঞাপন

ডেস্ক রিপোর্ট : পশ্চিম আকাশে সূর্য। কুসুম-রাঙ্গা সূর্যটি যখন ডুবি ডুবি, নামছে সন্ধ্যা। তখনই কাকেরা দল বেধে উড়ে আসতে থাকে আপন নীড়ে। বসে পড়ে নিজেদের চিরচেনা আপন ঠিকানায়। কা কা শব্দে মুখোরিত চারিপাশ। বাঁশ ঝাড়, গাছের ডাল, কিংবা বাড়ির চাল, সর্বত্র কাকের অবাধ বিচরণ। অভয়াশ্রমে যেন তারা নিরাপদ।

এভাবেই চলছে দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে। তাই এ বাড়ির নামই কাকের বাড়ি। বাড়িটি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের মেদেনিমহল গ্রামে।

চল্লিশ বছর ধরে কাক আসা নিয়েও রয়েছে কথিত সব কল্পকাহিনী। বলা হয়ে থাকে, দীর্ঘ চল্লিশ বছর আগে এই বাড়িতে বসবাস করতেন এখলাস নামের একজন ইমাম। মোয়াজ্জিনকে মারতে গিয়ে ভুল বশত ইমামকে হত্যা করে ফেলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। এরপর থেকে ঐ ইমামের বাড়ির চারপাশ ঘিরে রেখেছে কাকেরা। চারদিকে শুধু কাকের কা-কা শব্দ। বাঁশ ঝাড়, গাছের ডাল, কিংবা বাড়ির চাল, সর্বত্র কাকের অবাধ বিচরণ। তাই লোকজন এলাকার নাম দিয়েছেন ‘কাকের বাড়ি’। সন্ধ্যার পরে পুরো বাড়িটাই কাকে কালো হয়ে যায়। এতে খুশি এলাকার লোকজনও।

গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের গ্রামের একটি বাড়িতে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে কাক পাখি বসবাস করে। অনেক পাখি দেখে আমার এলাকার মানুষ আনন্দিত। এলাকার মানুষ বাড়ির নামটি দিয়েছে কাকের বাড়ি। একটি সিজনে এখানে অনেক পাখি আসে। সরকারের কাছে অনুরোধ করছি এগুলো সংরক্ষণ করার জন্য।

মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, আমাদের মেদিনিমহল গ্রামের মৌলভীচক এলাকার কয়েকটি বাড়িতে দীর্ঘদিন কাক বসবাস করে। কাকগুলো কোনোদিন কারো ক্ষতি করেনি। আমরাও দেখে অনেক উপভোগ করি, আনন্দ পাই। আমাদের গ্রামেও বিভিন্ন সময়ে অনেক ধরণের পাখি আসে। অতিথি পাখিরা এখানে আসে আবার সময় হলে চলে যায়।

মসজিদের ইমাম আবু তোরাব বলেন, এই ‘কাকের বাড়ি’ আমাদের এলাকার সৌন্দর্য। পাখিগুলো দেখে দর্শকদের মনের মধ্যে আনন্দ জাগে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই পরিবেশ যদি আমরা ধরে রাখতে পারি তবে আমাদের মনের আনন্দ প্রেরণা ও উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে।

পাখি তথ্য সূত্রে জানা যায়, কাক পাখি বিচরণ করে যত্রতত্র। শুধু তাই নয়, মানুষের সান্নিধ্য পেতে এরা বাড়ির আশপাশে বিচরণ করে। উচ্ছিষ্ট, পচাগলা খেয়ে মানুষের যথেষ্ট উপকারও করে সামাজিক এই পাখি। দলের কেউ অন্যায় করলে নিজেদের ভেতর বোঝাপড়া করে। মানুষ বা অন্য কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে দলের সবাই মিলে একত্রিত হয়ে সমবেদনা জানায়। দেশে পাতি কাক ও দাঁড় কাক, এই প্রজাতির কাক দেখা যায়। যে কোনো ধরনের উচ্ছিষ্ট খাবার। বলা যায় সর্বভূক পাখি এরা। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু শাখায়। অথবা বাড়ির কার্নিসে এবং বিদ্যুতের খুঁটিতেও। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে সরুডাল, ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৬টি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, হাজার হাজার কাক পাখি এখানে বসবাস করে। আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এখানে প্রতিনিয়তই কাক বসে। এগুলো নিয়েই আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার। আমি কাক পাখি, বক পাখিসহ আমাদের এলাকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে সবাইকে মেদিনিমহল গ্রামে স্বাগত জানাই।

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ