বিজ্ঞাপন
জাহিদ উদ্দিন : সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাদেপাশা ইউনিয়নের উত্তর আলমপুরের আলমপুর-মাসুরা (খুর্শিদের খেয়াঘাট) রাস্তা এখন বিলীন হওয়ার পথে। প্রাচীনতম জনগুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি প্রায় দুই যুগ ধরে। আলমপুর খালের ভাঙ্গনে প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার এখন অস্তিত্ব সংকটে। একের পর এক রাস্তাটি বিলীন হয়ে গেলেও সংস্কারে নেই কোন উদ্যোগ। এতে দুর্ভোগে রয়েছেন কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার উত্তর বাদেপাশা ও ভাদেশ্বর এ দুই ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে জনগুরুত্বপূর্ণ উত্তর আলমপুরের আলমপুর-মাসুরা (খুর্শিদের খেয়াঘাট) রাস্তা। রাস্তাটি অর্ধেক কিলোমিটার বাদেপাশা ইউনিয়নের অধীনে থাকলেও আড়াই কিলোমিটার রাস্তা ভাদেশ্বর ইউনিয়নের অধীনে রয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে ছিলিমপুর, খাটাকালির পাড়, কুশিয়ারা পুলিশ ফাঁড়ি, কোনাগাঁও, উত্তর আলমপুর, কুলিয়া, কেউটকোনা, রাকুয়ারবাজার, দক্ষিণ আলমপুর, বাগলা, সুপারটেক, সোনার পাড়া ও কালাইন সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার লোকজন যাতায়াত করেন এ রাস্তা দিয়ে।
রাস্তাটি ক্রমেই বিলীন হওয়ার ফলে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াতকারী শত শত ছাত্র-ছাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। এ ছাড়া এলাকার লোকজন যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কোন রোগী নিয়ে আসতে হলে পলো কিংবা বাশের মাচাং দিয়ে পায়ে হেটে ৩কিলোমিটার রাস্তা আসতে হয়। অনেক গর্ভবর্তী মহিলার প্রসব হয়েছে রাস্তায়। রাস্তা না থাকার ফলে কৃষকরা শহরে এনে ফসল বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে বিশাল এ এলাকার কৃষি জমি রয়েছে পতিত অবস্থায়। এছাড়া এলাকায় ব্যবসা-বানিজ্যে পড়েছে ভাটা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সংস্কারের অভাবে প্রাচীনতম এ রাস্তাটি পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। দীর্ঘদিন রাস্তায় উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় রাস্তার কোথাও আধা ফুট, কোথাও এক ফুট আবার কোথাও দেড় ফুট রয়েছে। পাশ দিয়ে ভয়ে যাওয়া আলমপুর খালের ভাঙ্গনে একে বিলীন হয়ে যাচ্ছে রাস্তাটি।
মাসুরা গ্রামের বায়োবৃদ্ধ কৃষক আরব আলী আক্ষেপ করে বলেন, এক সময় আলমপুরের এই রাস্তা দিয়ে যানবাহনও চলাচল করতো। এখন যানবাহন চলাচল দূরের কথা মানুষ চলাচল কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও এই এলাকার কৃষকরা তাদের কৃষি পণ্য ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে জেলা ও উপজেলা শহরে বিক্রি করতে পারছেন না।
উত্তর আলমপুর গ্রামের প্রবাসী ফারুক আলী বলেন আমরা প্রবাসে থাকি। কিন্ত এলাকার এসে যখন রাস্তাঘাটেত এই অবস্থা দেখি তখন আর এলাকায় আসতে মন চায়না। রাস্তা না থাকার ফলে আমরা পায়ে হেটে ৩ কিলোমিটার যাতায়াত করতে হয়।
ছিলিমপুর গ্রামের হাফিজ আব্দুল হক বলেন, আমাদের দুর্গতির কোন শেষ নেই। এলাকাবাসী বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও আমাদের এ রাস্তাটি মেরামতে কেউ এগিয়ে আসছে না।
এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর আলমপুরের আলমপুর-মাসুরা (খুর্শিদের খেয়াঘাট) রাস্তা সংস্কারের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সর্বশেষ আবারো আদেবদন করা হলে গত রোববার উপজেলা নির্বাহী বর্মকর্তা মামুনুর রহমান ও উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান এ রাস্তাটি পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, রাস্তাটি পরিদর্শন করেছি। এখন সার্ভে করে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠাবো এবং স্থানীয় এমপি মহোদয়কেও এ বিষয়ে অবহিত করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, রাস্তাটি আসলেই অস্তিত্ব সংকটে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে বুঝতে পেরেছি। শিগগিরই মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে।