Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সর্বশেষ সংষ্করণ 2022-02-20T12:00:04Z
জানা-অজানা

আগর-আতরের রাজধানী বড়লেখার ‘সুজানগর'

বিজ্ঞাপন

ডেস্ক রিপোর্ট :  প্রাকৃতিক সুগন্ধির নাম আতর। সেই আতর উৎপন্ন হয় আগর গাছ থেকে।

গাছের বয়স চার/পাঁচ বছর হলেই তার সারা শরীরে আট/১০ কেজি পেরেক বিঁধে দেওয়া হয়। সেই পেরেক বেঁধা ক্ষত থেকেই জন্মে ফাংগাসজাতীয় কালো কালো অংশ। 

এ অংশই কেটে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমেই তৈরি হয় বিশ্বমানের আতর। তারপর তা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রফতানি করে আয় করা হয় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এ আতরশিল্পের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে প্রায় ৩০ হাজার লোক জড়িত।  

বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নকে আমাদের দেশের আগর এবং আতরের রাজধানী বলা হয়। এখানে ঘরে ঘরে চাষ হচ্ছে আগর। ঘরে ঘরে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা।  

সুজানগরে ঢুকলেই নজর কাড়ে মানুষের বসতবাড়ির দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সরু থেকে মাঝারি সারি সারি আগরগাছ।  

পিচ ঢালাই আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে পৌঁছতে দেরি হলো না আগর উৎপাদন কেন্দ্রে পৌঁছাতে। আগর উৎপাদনকারী, আমদানি ও রপতানিকারক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়াকারী প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ।  

এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মো. আনসারুল হক। তিনি একাধারে বাংলাদেশ আগর আতর ম্যানুফেকচার অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।  

আগর কাঠ থেকে কীভাবে আতর তৈরি হয়? -এ পুরো প্রক্রিয়াটি তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে আমরা পেরেক মারা আগর গাছ নিয়ে আসি। ওই গাছগুলোতে পেরেক গেঁথে রাখি পাঁচ থেকে সাত বছর। ওই গাছ কেটে কারখানায় এনে পেরেকগুলো বের করা হয়। এরপর শ্রমিকরা সেই গাছের অংশকে ছোট ছোট করে কাটেন। সেই কাটা অংশকে সাদা ও কালো এ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। পেরেক মারা অংশ, যেটাতে রোগ হয়, সেই অংশটাকে আমরা কালো অংশ বলি। সেই কালো অংশগুলো আলাদা ট্যাংকে ভিজিয়ে রাখি। আবার সাদা অংশটাকেও কেটে এনে আলাদাভাবে ভিজিয়ে রাখা হয়। ১৫/২০ দিন ধরে ভিজিয়ে রাখার পর সেই ভেজা অংশগুলোকে পাতনে (স্টিলের বড় কড়াই) দেওয়া হয়। তারপর নির্দিষ্ট সময় পর সেই পাতন থেকে আতর তৈরি হয়ে অন্য পাত্রে এখানে জমা হয়ে থাকে।  

দুই ধরনের আতরের দরদাম সম্পর্কে মো. আনসারুল হক বলেন, কালো এবং সাদা আলাদা করার মানে হলো- কালোটা এক নম্বর আতর এবং সাদাটা দুই নম্বর আতর। প্রতি এক তোলা (১০ গ্রাম) কালো আতর বিক্রি হয় ছয় থেকে সাত হাজার টাকায় এবং সাদাটা বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। সাদা আতর দিয়ে উদ-পারফিউম (এলকোহল ছাড়া) তৈরি হয়।
  
কতদিন কাঠের টুকরোগুলোকে জ্বাল দিতে হয়? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পানির সঙ্গে বাষ্প হয়ে অল্প অল্প আতর বের হয়। পাতন থেকে অন্য একটা পাত্রে আতর এসে জমা হয়। তিন টাইমে আতরটা কাটি। প্রথম পাঁচ দিনে, ১০ দিনে এবং সর্বশেষ আরো ১০ দিন পরে। মোট ২৫ দিনের মতো গরম পানিতে জ্বাল দিতে হয়। বেশি ভালো পণ্য হলে আতর যদি ছেড়ে দেয়, তবে ৩০ দিন জ্বাল দিয়ে থাকি। অন্যান্য ছোট পাতন (২৫ কেজি ধারণক্ষমতা) ১০ দিন জ্বাল দিই। এটা ৫০০ কেজি ধারণক্ষমতার বড় পাতন, এজন্য বেশি জ্বাল দিই। এখানে গ্যাসের সাহায্যে আমাদের পাতনগুলো জ্বাল দেওয়া হয়।   

আগর কাঠের টুকরোগুলোকে জাল দেওয়ার পর সেই কাঠগুলো থেকে তেলের নির্যাস বের হয়। সেই তেল ছেকে ফিল্টারিং (পরিশোধন) করে সর্বশেষ তৈরি হয় বহু প্রতীক্ষিত মূল্যবান আগর।  

এ সর্বশেষ ধাপটি সম্পর্কে  তিনি বলেন, আগর পাতন থেকে আমরা যখন জ্বাল দিয়ে কাঠের টুকরো থেকে আতরটা বের করব, তখন কাফনা নামে স্টিলের একটা পাত্র আছে। পাতন থেকে বের হওয়া তরল অংশগুলো হাতের তালু, বুড়ো আঙুল বা হাতের উঁচু অংশের সাহায্যে তেলগুলো বের করে কাফনাতে রাখি। তারপর রোদে দিতে হয়। ওই তেলের মধ্যে থাকা পানিগুলো আলাদা হবে এবং তেলগুলো আলাদা হবে। তারপর একটা পরিষ্কার কাপড়ের মধ্যে ঢেলে দিলে আতর নিচে চলে যায় আর সুক্ষ্ম বর্জ্যগুলো ওপরে থেকে যায়। এভাবেই ফিলটার  হয়ে আতর বের হয়।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ