Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০
সর্বশেষ সংষ্করণ 2020-11-09T05:13:05Z
সিলেট

পুলিশ কমিশনারকে বেঁধে দেওয়া সময় শেষ কাল : গ্রেফতার হয়নি আকবর

বিজ্ঞাপন

জিভয়েস২৪ ডেস্ক : নগরীর রায়হান হত্যার এক মাস হতে চললো। বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতনে হত্যা করা হয় রায়হানকে। কিন্তু এখনো গ্রেপ্তার হয়নি আলোচিত এ ঘটনার মূল নায়ক বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভুইয়া।

পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তারে টানা অভিযান চালালেও কোথাও তার খোঁজ মেলেনি। সে ভারতে পালিয়ে গেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডটির ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

পিবিআই বলছে- আকবরকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও মামলার তদন্ত সঠিক পথেই চলছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।

গত ১১ই অক্টোবর ভোররাতে এসএমপির বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে এনে নির্মম নির্যাতন চালানো হয় নগরীর নেহারীপাড়ার যুবক রায়হানকে। পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় এখনো ক্ষোভ বিরাজ করছে নগরীতে। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে রায়হানের মা বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন। পরে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আশ্বাসে ঘরে ফিরে গেছেন। বৃহত্তর আখালিয়ার ১২ হামছায়ার (এলাকা) মানুষ এক প্ল্যাটফরমে এসে আন্দোলনে নেমেছিলেন।

তারা কাল ১০ই নভেম্বর পর্যন্ত সিলেটের নবাগত পুলিশ কমিশনারকে সময় দিয়েছেন। এরপর তারা বৈঠক করে ফের কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রায়হানকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করা হয়েছিল এসএমপি পুলিশের তরফ থেকে। আকবরের কথা বিশ্বাস করে সিনিয়র কর্মকর্তারাও বিষয়টি ‘গণপিটুনি’ বলে স্বীকার করেন। পরে মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদন্তে এবং সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে এনে নির্যাতন করা হয়েছে।

এর পরপরই মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে বন্দরবাজার ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুইয়া, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদকে সাময়িক বরখাস্ত ও এএসআই আশেক এলাহীসহ আরো তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়।

এদিকে- বরখাস্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে ছিল এসআই আকবর। কিন্তু বরখাস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সহকর্মী এসআই হাসানের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন থেকে এসআই আকবর পলাতক।

এ ঘটনায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের তদন্ত টিমও সিলেট পরির্দশন করে। এসআই আকবর পলাতক হওয়ার পেছনে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় তদন্ত কমিটি। ফলে তদন্ত কমিটির মতামতের ভিত্তিতে বন্দরবাজার ফাঁড়ির পরবর্তী দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রায়হান হত্যাকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় ও আন্দোলন শুরু করার কারণে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে সিলেট থেকে বদলি করা হয়। তার স্থলে এসে যোগ দিয়েছেন নতুন কমিশনার ডিআইজি নিশারুল আরিফ। রায়হান হত্যার ঘটনায় এরই মধ্যে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই তিন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়েছে।

এরা হচ্ছে- এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদ। তিনজনের কেউ-ই রায়হান হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। এর মধ্যে এসআই আশেক এলাহী নগরীর কাস্টঘর এলাকা থেকে রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছিল। কী কারণে রায়হানকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল সে বিষয়টি এখনো খোলাসা হয়নি। আশেক এলাহীকে ৫ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পিবিআই। পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেষে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। রায়হান হত্যা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর মহিদুল ইসলাম করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে এরই মধ্যে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে পিবিআই ইন্সপেক্টর আওলাদ হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে মামলার তদন্ত কাজ থেমে নেই বলে জানিয়েছেন পিবিআই সূত্র। আকবর গ্রেপ্তার না হলেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে চার্জশিট প্রদানের প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে- ভাতিজা হত্যার খবর শুনে আমেরিকা থেকে সিলেটে এসেছেন নিহত রায়হানের চাচা আব্দুল কুদ্দুস। রায়হান হত্যার মামলা পরিচালনাসহ নানা বিষয়ে তিনি পারিবারিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবে- রায়হানের পরিবার এখন নতুন করে এলাকাবাসীর সঙ্গ ছেড়ে আন্দোলনে নামতে চাইছে না।

এ কারণে সিলেটের নবাগত পুলিশ কমিশনারকে পরিবার ও এলাকাবাসী আকবরকে গ্রেপ্তার করতে কাল ১০ই নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। নিহত রায়হানের আত্মীয় আব্দুর রহমান সিলেটের হালচালকে জানিয়েছেন- রায়হানকে প্রথমে ছিনতাইকারী বানানো হয়েছিল। এতে শুধু আমরা নই, এলাকার মানুষও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলেন। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার ও খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছিলেন। এ কারণে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রায়হানকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে- এই বিষয়টি এখন প্রমাণিত। কিন্তু প্রধান সন্দেহভাজন এসআই আকবর হোসেন ভুইয়া গ্রেপ্তার হচ্ছে না। এতে করে আমার পরিবার কিছুটা বিচলিত। পলাতক থেকে আকবর পরিবারের ক্ষতি করতে পারে ধারণা সবার। ফলে আকবরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা পরিবারের দাবি। আকবর গ্রেপ্তার হলেই পরিবার স্বস্তি পাবে বলে জানান তিনি।

এদিকে- ১২ হামছায়ার (এলাকা) শীর্ষ নেতা ও স্থানীয় কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কামরান সিলেটের হালচালকে জানান, শুরু থেকে আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে পলাতক এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করার। এই দাবিতে এখনো এলাকার মানুষ অনঢ়। আকবর গ্রেপ্তার হলেই মানুষের ক্ষোভ কমবে। এরপর সঠিক তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে রায়হান হত্যার বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে হবে। তিনি বলেন- রায়হানের চাচা আব্দুল কুদ্দুস আমেরিকা থেকে দেশে এসেছেন। তার সঙ্গে আমরা বসবো। আগামী ১০ই নভেম্বর রাতে এ নিয়ে নতুন করে এলাকার লোকজন বসবেন। সবার সম্মতিতে যে সিদ্বান্ত হবে সেদিকে আমরা এগুবো।

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ