Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-09-07T15:44:11Z
জানা-অজানা

জগৎ বিখ্যাত আইনস্টাইনের এই দুষ্ট ছবির আসল রহস্য

বিজ্ঞাপন
জগৎ বিখ্যাত আইনস্টাইনের এই দুষ্ট ছবির আসল রহস্য

ডেস্ক রিপোর্ট : জিভ বের করে দুষ্টু চোখে চেয়ে আছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সায়েন্টিস্টদের মধ্যে একজন আলবার্ট আইনস্টাইন। আইনস্টাইনের এই ছবি নিয়ে গল্প কথার শেষ নেই। অনেকে ভাবেন এটি আইনস্টাইনের খেয়ালি,পনার একটি মুহূর্ত ফ্রেমবন্দী করা হয়েছিল। কেউবা বলেন ইচ্ছা করেই আইনস্টাইন এমন পোজ দিয়েছিলেন ফটোগ্রাফারের সামনে। আসল সত্যটা আসলে কি?

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। জগৎ বিখ্যাত এই পদার্থবিদের বহু আচরণই অনেকের কাছে বিস্ময়ের। সে রকমই ৭০ বছর আগে তোলা তার এই ছবিটি। আইনস্টাইনের ছবির প্রসঙ্গ উঠলেই চোখের সামনে প্রথমে ভেসে ওঠে এই ছবিটি। কিন্তু অনেকেই জানেন না কেন জিভ বার করা অবস্থায় এমন অদ্ভুত ছবি তুলেছিলেন তিনি। আর কেনই বা তার মতো তার এই ছবিটিও বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল।

৪ মার্চ, ১৮৭৯ সালে জার্মানির উলমা শহরে জন্ম আইনস্টাইনের। ১৯৫১ সালে তিনি আমেরিকায় থাকতেন এবং নিউ জার্সির প্রিন্সটনে ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিতে গবেষণা করতেন। জন্মদিন উপলক্ষে ওই গবেষণা কেন্দ্রেই তার সহকর্মীরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে আইনস্টাইনের যোগ দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গবেষণা কেন্দ্রের বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন পাপারাৎজিরা।

ইনস্টিটিউটের বাহির আইনস্টাইনের জন্মদিনের ওই মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করতে তৈরি ছিলেন তারা। সে খবর আইনস্টাইনের কানেও পৌঁছেছিল। সংবাদমাধ্যম, ক্যামেরার ঝলকানি বরাবরই অপছন্দ ছিল আইনস্টাইনের। পাপারাৎজিদের এড়িয়ে কোনোমতে গাড়িতে উঠে বসে পড়লেও ক্যামেরার ঝলকানি এড়াতে পারেননি।

আইনস্টাইন তখন এক দিকে ওই ইনস্টিটিউটের তৎকালীন অধিকর্তা ফ্রাঙ্ক আয়দেলট এবং তার স্ত্রী মেরির মাঝে স্যান্ডউইচের মতো প্রায় লুকিয়ে বসেছিলেন। পাপারাৎজিদের ক্যামেরার ঝলক এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বারবারই তাদের ছবি তোলা বন্ধ করার অনুরোধ করছিলেন তিনি। ঠিক সে সময়ই এক চিত্রগ্রাহকের তরফ থেকে হাসি মুখে ছবি তোলার অনুরোধ ভেসে আসে।

তিতিবিরক্ত আইনস্টাইন হাসির বদলে জিভ বার করে এই অদ্ভুত ভঙ্গি করেছিলেন। সেটিই চিত্রগ্রাহক আর্থার স্যাসের ক্যামেরায় বন্দি হয়ে যায়। পরবর্তীকালে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি আইকনিক ছবিতে পরিণত হয়। তবে ছবিটির বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জনের পিছনে কিন্তু ওই চিত্রগ্রাহকের কোনও হাত ছিল না। আইনস্টাইন নিজেই এটি জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। ছবিটি তার এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে তার একাধিক কপি ওই চিত্রগ্রাহকের কাছ থেকে নিয়েছিলেন তিনি। তার পর গাড়িতে তার দু’পাশে বসে থাকা দু’জনকে কেটে বাদ দিয়ে দেন কপিগুলো থেকে।

এই কপিগুলো পরিচিত বৃত্তে পাঠাতে শুরু করেন আইনস্টাইন। তাতে ক্যাপশন ছিল, ‘বেরিয়ে থাকা জিভই আমার রাজনৈতিক ধারণার প্রতিবিম্ব।’ এর পরই মূলত সেটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ২০০৯ সালে তার সই করা আসল ছবিটি নিলামে বিক্রি হয়। দাম উঠেছিল প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা। আসল ছবিটি ১৯৫১ সালে তোলা হয়েছিল। এই ছবিটি ছাড়াও তার আরও বেশ কিছু বিষয় অনেককেই বিস্মিত করে। রোজ অন্তত ১০ ঘণ্টা ঘুমোতেন তিনি। তার মতে, এই ঘুমের মধ্যেই তিনি নাকি কঠিন সমস্যার সমাধান করে ফেলতেন। 

তার এমন কিছু স্বভাব ছিল, যেগুলো অনেকের কাছে মোটেই স্বাভাবিক ছিল না। তার মতো এক জন বিজ্ঞানী যে এগুলো করতে পারেন, তা কল্পনাও করতে পারতেন না অনেকে। আবার অনেকের মতে, এই স্বভাবগুলোই আইনস্টাইনের মস্তিষ্ককে আরও তীক্ষ্ণ করে তুলেছিল। তিনি কখনও মোজা পরতেন না। ছোট থেকেই এই অভ্যাস তৈরি হয়েছিল তার। বিশ্বাস করতেন, যা আরামদায়ক সেটাই পরা উচিত। মোজা তার কাছে একেবারেই আরামদায়ক ছিল না। মস্তিষ্কের সঙ্গে হাত আর চোখের সমন্বয় ঘটানোর জন্য রোজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভায়োলিন বাজাতেন। আইনস্টাইনের দাবি ছিল, এতে নাকি কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমে মন চাপমুক্ত থাকে।

১৯২১ সালে আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার পুরস্কার লাভের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান এবং বিশেষত আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কীত গবেষণার জন্য।

আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর গবেষণা করেন এবং নতুন উদ্ভাবন ও আবিষ্কারে তার অবদান অনেক। সবচেয়ে বিখ্যাত আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব বলবিজ্ঞান ও তড়িচ্চৌম্বকত্বকে একীভূত করেছিল এবং আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব অসম গতির ক্ষেত্রে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে একটি নতুন মহাকর্ষ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তার অন্যান্য অবদানের মধ্যে রয়েছে আপেক্ষিকতাভিত্তিক বিশ্বতত্ত্ব, কৈশিক ক্রিয়া, ক্রান্তিক উপলবৎ বর্ণময়তা, পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞানের চিরায়ত সমস্যাসমূহ ও কোয়ান্টাম তত্ত্বে তাদের প্রয়োগ, অণুর ব্রাউনীয় গতির একটি ব্যাখ্যা, আণবিক ক্রান্তিকের সম্ভ্যাব্যতা, এক-আণবিক গ্যাসের কোয়ান্টাম তত্ত্ব, নিম্ন বিকরণ ঘনত্বে আলোর তাপীয় ধর্ম (যা ফোটন তত্ত্বের ভিত্তি রচনা করেছিল), বিকিরণের একটি তত্ত্ব যার মধ্যে উদ্দীপিত নিঃসরণের বিষয়টিও ছিল, একটি একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বের প্রথম ধারণা এবং পদার্থবিজ্ঞানের জ্যামিতিকীকরণ।

আইনস্টাইনের গবেষণাকর্মগুলো বিধৃত রয়েছে ৫০টিরও অধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র এবং কিছু বিজ্ঞান-বহির্ভূত পুস্তকে। ১৯৯৯ সালে টাইম সাময়িকী আইনস্টাইনকে ‘শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি' হিসেবে ঘোষণা করে।

এছাড়া বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীদের একটি ভোট গ্রহণের মাধ্যমে জানা গেছে, তাকে প্রায় সবাই সর্বকালের সেরা পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সাধারণ সংস্কৃতি এবং দৈনন্দিন ব্যবহারে মেধাবী এবং প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন কাউকে বা কোনো কিছুকে বুঝাতে এখন তাই ‘আইনস্টাইন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ এটি মেধার সমার্থক। এই মেধাবী মানুষটাকে নিয়ে কৌতূহল থেকে তার ড.হারবি মস্তিষ্ক চুরি করে রেখে দিয়েছিলেন। 

আইনস্টাইনের শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর যেন তার শেষকৃত্য যাতে আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। কিন্তু প্যাথলজিস্টরা বলেছিলেন, এত বড় বিজ্ঞানীর শরীরকে তারা বৃথা মাটিচাপা দিয়ে ধ্বংস করতে চাই না। তারপরে এক প্যাথলজিস্ট চুরি করে আইনস্টাইন এর মাথা খুলে মস্তিষ্ক রেখে দেয়। এমনকি আইনস্টাইনের চোখ দুটিও তুলে নেয়। ডঃ হারবি নামের ঐ ব্যাক্তি আইনস্টাইনের অঙ্গগুলোকে আলদা আলাদা পাত্রে রেখে দেন। আর তারপরে নিজেই ফোন করে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বিষয়টি বলে দেন। 

আর এই খবর শুনে আইনস্টাইনের পরিবার খুব রাগান্বিত হয়ে যায়। তারপর ড. হারবি আইনস্টাইনের পরিবারকে বলেন সে যা করেছেন সেটা সাইন্সের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল আর এই কথা শুনে পরবর্তীতে আইনস্টাইনের পরিবার তাতে রাজি হয়ে যায়। তারপর আইনস্টাইনের চোখ দুটো আইনস্টাইনের চোখের ডাক্তার হারনি আব্রাহামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর তিনি আইনস্টাইনের চোখ একটি সংরক্ষন পাত্রে ভরে রেখে দেন। 

ধারণা করা হয়, ঐ লকারটি নিউ ইয়র্ক সিটির ভেতরেই এখনও আছে। আর আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক ডঃ হারবি ২৪০টি অংশে বিভক্ত করেছিল। আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের আলাদা আলাদা অংশ দিয়ে তিনি ১০০০ এরও বেশি স্লাইড তৈরি করেছিলেন, আর প্রতিটি স্লাইড আলাদা আলাদা করে পৃথিবীর সব বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ড. হারবি  বলেছিলেন তিনি আইনস্টাইনের মস্তিস্ক নিচ্ছেন সাইন্সের কাজে ব্যবহার করার জন্য। তবে সে যে স্লাইডগুলো বিজ্ঞানীদের কাছে পাঠিয়ে ছিল তা থেকে আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক সম্পর্কে অনেক নতুন নতুন ইনফরমেশন জানা গিয়েছিল। 

যেমন- সাধারণ মানুষের আইকিউ ৯০ থেকে ১১০ এর মধ্যে হয়ে থাকে, সেখান আইনস্টাইনের আইকিউ ১৬০ থেকে ১৯০ এর মধ্যে ছিল। জেনে অবাক হবেন যে, আইনস্টাইনের মস্তিস্ক সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় একটু ছোট ছিল। এছাড়াও মস্তিষ্কের একটি অংশ যার নাম ইনফেরিয়র পেরাইটল, আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ঐ অংশটা সাধারণ মানুষের থেকে ১৫ শতাংশ বেশি বড় ছিল। এটা মস্তিষ্কের অংশ যা ভাষা ও ম্যাথমেটিক্সের জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের একটা ফাটলও ছিল না যার নাম সেলভিয়ান ফিসার। এটা মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় ফাটল। 
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ