Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ মে, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-05-23T13:58:14Z
লিড নিউজহবিগঞ্জ

হবিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর টাকার বিনিময়ে দিচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান!

বিজ্ঞাপন

জিভয়েস ডেস্ক : “আশ্রয়নের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার”-এই শ্লোগানে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বানিয়াচংয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য পাকা ঘর। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে বানিয়াচংয়ের কয়েকটি ইউনিয়নে ঘর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। উপজেলার ৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সেকান্দরপুর ও গুগরাপুর গ্রামে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ২০টি ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন অফিস। 

এইসব ঘরের জন্য উপকারভোগীদের তালিকা তৈরি এবং ঘর প্রদান করতে ভূমিহীনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নাম তালিকাভুক্ত ও ঘর প্রদানের জন্য মোটা অংকের টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বানিয়াচং উপজেলার ৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ আলীর বিরুদ্ধে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘর পাওয়া তালিকায় থাকা কয়েকজন উপকারভোগী জানান, আমাদের ঘর দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান এরশাদ আলী ঘর প্রতি ৫০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। তালিকায় থাকা ২০ জনের মধ্যে ১৫ জনই তাকে টাকা প্রদান করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

উপকারভোগীরা জানান, ৫০ হাজার টাকা সরাসরি চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়নি। গুগরাপুর গ্রামের চেয়ারম্যান এরশাদ আলীর কাছের লোক বলে পরিচিত পিংকু দাস নামের এক লোকের কাছে দেয়া হয়েছে। 

সরেজমিনে কাগাপাশা ইউনিয়নের সেকান্দরপুর ও গুগরাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,দুই শতক জায়গার উপর দুইটি শোবার ঘর,রান্নাঘর ও বাথরুম। ইটের দেয়াল, উপরে টিনের চাল। আশ্রয়ন প্রকল্প-২এর প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। উপকারভোগীদের জন্য ২০টি ঘর স্থাপনের মধ্যে মাত্র ১টি ঘরের কাজ শেষ হয়েছে। 

এলাকাবাসী জানিয়েছেন,সরকারি এই ঘরে যে ইট আর কাঠ ব্যবহার করেছে তা খুব একটা ভালো না। জোড়াতালি দিয়ে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে বাকি ঘরের কাজ চলমান থাকলেও কাজের মান একেবারে নিম্নমানের। কয়েকদিন পূর্বে একটি ঘরের পিলার যা ইট দিয়ে নির্মাণ করা ঝড়-তুফানে ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে। তবে এই পিলারগুলো ঝড়-তুফানে নয় কে বা কারা রাতের আধারে ভেঙ্গে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান এরশাদ আলী। 

গুগরাপুর গ্রামের এক উপকাভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমার জমি-জমা কিছুই নাই। ঘর পেতে ৫০ হাজার টাকা চেয়ারম্যানকে দিতে হবে বলে জানিয়ে দেন। অনেক কষ্ট করে চড়াসুদে এই টাকা এনে চেয়ারম্যানের লোক পিংকু দাসের কাছে দিয়েছি। তবে টাকা দেয়ার বিষয়টি কাউকে না বলতে পিংকু আমাকে শাসিয়ে দেয়। কি আর করব টাকা দেয়ার কথা বললে হয়তো আমি ঘর নাও পেতে পারি। 

অন্যদিকে সেকান্দরপুর গ্রামের গৃহহীন গোপেশ দাস জানান, চেয়ারম্যান এরশাদ আলীকে ৫০হাজার টাকা দিতে না পারায় আমাকে ঘরের তালিকায় নাম দেননি তিনি। যারা এই ঘর পেয়েছে তারা গ্রামের অনেক স্বচ্ছল ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক। প্রকৃত গৃহহীনরা ঘর পাননি। 

ঘর নির্মাণ কাজে জড়িত ঠিকাদার নবীর আলী জানান, এলাকার মানুষের মুখ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টা আমি শুনেছি। অনেক মানুষ এখানে এসে চেয়ারম্যানকে গালমন্দ করে। আবার কেউ কেউ এসে চেয়ারম্যানের গুনগানও গায়। আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না। 

টাকা নেয়ার বিষয়ে পিংকু দাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে মাটি ভরাটের জন্য উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৫০হাজার টাকা করে নেয়ার কথা বলেন। আমি এই পর্যন্ত ৭জন উপকারভোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। বাকিগুলোর খবর আমার জানা নেই। 

৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এরশাদ আলীর সাথে কথা হলে তিনি এই বিষয়ে জানান,টাকা নেয়া হয়েছে ঠিকই। উপকারভোগী নিজেরাই মাটির ভরাটের কাজ করিয়েছে। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিংকু আমার লোক সেটা ঠিক না। তাকে শুধুমাত্র দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এই কাজ দেখভাল করার জন্য। 

বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান,উপকারভোগীদের কাছ থেকে মাটি ভরাটের জন্য টাকা-পয়সা নেয়ার সিস্টেম নাই। তারপরও কোনো জায়গায় যদি মাটির প্রয়োজন হয় উপকারভোগীরা চাইলে নিজেদের টাকায় সেটা করতে পারে। এছাড়া এটার বাইরে গিয়ে ঘর প্রদান বাবদ কেউ যদি কোনো টাকা নেয় তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

এ ব্যপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘর বন্টনে অনিয়ম করে কেউ পার পাবে না। তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র : সিলেট টুডে
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ