Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: রবিবার, ৬ জুন, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-06-06T07:39:17Z
সিলেট

খারিজ হওয়া রিটে 'বেকুব' সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তর

বিজ্ঞাপন


জি ভয়েস ডেস্ক: আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ বিষয়ে জনসচেতনতায় চলছে নানা প্রচার-প্রচারণা। তবে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার মাঝেও কারও কারও কাছে ভোগান্তির অপর নাম ‘পরিবেশ অধিদপ্তর’! যে ভোগান্তি সিলেটের সদর উপজেলার পাঠানগাঁ এলাকায় বসতঘরের পাশে তৈরি হওয়া মাহিশা পোল্ট্রি ফার্মের কারণে। এ নিয়ে ভোগান্তিতে ওই ঘরের বাসিন্দা আশরাফ আহমদ। শুরু থেকে লিখিত অভিযোগ, অনুযোগ সবই করেছেন।

সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরে ধর্না দিয়ে গিয়েছেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হয়নি। বরং পোল্ট্রি ফার্ম মালিকের করা একটি রিটের কারণে কোন পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছিলো না বলে জানিয়ে আসছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন। তবে এবার জানা গেলো ভয়ংকর এক তথ্য। খারিজ হওয়া রিটে ‘বেকুব’ বনে আছেন কর্তৃপক্ষ।

বারবার চিঠি চালাচালি আর নোটিশেই সীমাবদ্ধ থেকেছেন সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তর। একাধিকবার ফার্মটি উচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেওয়া হলেও সকল নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়েছেন মাহিশা পোল্ট্রি ফার্মের মালিক নজরুল ইসলাম। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া পোল্ট্রি ফার্ম করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও সেই টাকাও আদায় করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বরং কোন কাগজ না পেয়েও রিটের দোহাই দিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তর। আর লাগাতার ভোগান্তি তৈরিতে নিয়জিত মাহিশা পোল্ট্রি ফার্ম মালিক। পরিবেশ অধিদপ্তর রিটের দোহাই দিয়ে উচ্ছেদ কিংবা কোন পদক্ষেপ নিতে না পারলেও ফার্ম বর্ধিত করতে পিছপা হচ্ছেন না নজরুল ইসলাম।

সম্প্রতি সরেজমিনে সদর উপজেলার শাহেব বাজারস্থ পাঠানগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ভয়ঙ্কর দৃশ্য। আশরাফ আহমদ নামের এক ব্যক্তির ঘর থেকে মাত্র ১০ হাত দূরে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মোরগ ধারণ ক্ষমতার একটি ফার্ম। আর এ ফার্ম থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ভনভন করছে মাছি। রোগে ভুগছেন আশরাফ আহমদের দুই সন্তান। বয়সের তুলনায় বাড়ছে না তাদের শরীর। এসময় মাহিশা পোল্ট্রি ফার্ম বর্ধিত করার দৃশ্য দেখা গেছে। এক সময় ফার্মটি ঘরের পাশে থাকলেও এখন আশরাফ আহমদের ঘরের সামন দিক আড়াল করে বড়ো করা হচ্ছে ফার্ম। সব সময় ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে রাখলেও ভেতর থেকে মিলছে গন্ধ।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভুক্তভোগী আশরাফ আহমদ জানান, আমি পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন পরিচালক সরেজমিনে এসে দুই মাসের মধ্যে ফার্ম অন্যত্র সরিয়ে নিতে এবং ছাড়পত্র ছাড়া ফার্ম করার অপরাধে নজরুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন দূরের কথা এই নির্দেশনা সম্পর্কে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেটিও আমাকে জানাতে গড়িমিশি করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরে আমি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ভাইয়ের পরামর্শে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে কিছু তথ্য পাই৷ এখানে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আমাকে জানানো হয় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তবে নজরুল ইসলাম উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছেন যে কারণে কোন পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে।

বসত ঘরের পাশে পোল্ট্রি ফার্ম


তিনি আরও বলেন, আমি সকলের কাছে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পরিবেশ মন্ত্রণালয় পর্যন্ত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

এদিকে সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরে সরাসরি গিয়ে মাহিশা পোল্ট্রি ফার্মের ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. এমরান হোসেন বলেন, ‘আমরা পল্লীবিদ্যুৎকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু পল্লীবিদ্যুৎ আমাদের জানিয়েছে এই ফার্মের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে রিট আছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ দিতে পরিবেশের অনুমতি লাগে না। তাই আমরাও কোন পদক্ষেপ নিতে পারছি না।’



আশরাফ আহমদের ঘরের সামন ঢেকে বড় করা হচ্ছে পোল্ট্রি ফার্ম।

কিন্তু রিটের কোন কপি পায়নি কোন কর্তৃপক্ষ। এমনকি কাকে বিপক্ষ করা হয়েছে তারও কোন তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। আছে কেবল একটি নম্বর। যে নম্বর জানিয়েছিলেন মাহিশা পোল্ট্রি ফার্মের মালিক নজরুল ইসলাম। বিদ্যুৎ অফিসকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হলে নির্দেশ বাস্তবায়ন না করতে নজরুল ইসলাম একটি লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে এ ফার্মের ব্যাপারে হাইকোর্টের রিট নম্বর ৭৩৪৬/২০২০ এর কথা উল্লেখ করেন। আর এ থেকেই জল ঘোলা শুরু। বিদ্যুৎ অফিসও রিটের ব্যাপারে অবগত করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে। আর এ থেকেই দায় মুক্ত হয়ে যান পরিবেশ অধিদপ্তর। রিটের কথা প্রচারের দায়িত্ব নেন সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. এমরান হোসেন।

কিন্তু সিলেট ভয়েসের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে রিটের খবর। হাইকোর্ট সূত্র জানায়, গত ১৫ মার্চ ২০২১ তারিখে এ রিট খারিজ হয়েছে। এমনকি মাহিশা পোল্ট্রি ফার্মের মালিকের নাম নজরুল ইসলাম হলেও হাইকোর্টের ওয়েবসাইট ঘেঁটে এটি ‘নজমুল ইসলাম’ নামে তা লিপিবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে। অথচ খারিজ হওয়া একটি রিটের ব্যাপারে অপপ্রচার করছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও মাহিশা পোল্ট্রি ফার্মের মালিক নজরুল ইসলাম। সম্প্রতি সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তর ও এক ভোগান্তির গল্প শিরোনামে সিলেট ভয়েসে সংবাদ প্রকাশের সময়ও কর্তৃপক্ষ থেকে এ রিটের কথা জানানো হয়। এমনকি রিট থাকা সত্ত্বেও মাহিশা পোল্ট্রি ফার্মের বর্ধিতকরণ কাজ করা হচ্ছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হলে এমরান হোসেন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও নেননি কোন পদক্ষেপ। বরং পরিবেশ দিবসে এসে জানা গেলো ভয়ঙ্কর এক তথ্য। মাহিশা পোল্ট্রি ফার্মের দেওয়া নির্ধারিত ‘মাসিক মাসোহারা’ পেয়েই নীরব পরিবেশ অধিদপ্তর।

এমন অবস্থায় শনিবার (৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিন রিট খারিজ হওয়ার কথা জানিয়ে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. এমরান হোসেনের বক্তব্য জানতে চাইলে সুর পাল্টান। প্রথমে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে তিনি রিটের কোন কপি পাননি বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা তো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কিন্তু পল্লীবিদ্যুৎকে চিঠি দিয়েছিলাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে। তারা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করছে না।’

অপরদিকে সিলেট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জিব কুমার রায় বলেন, ‘এটাতো আমাদের কাজ না। মূল দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। তারাই ব্যবস্থা নিবে। আমরা কেবল তাদের সহযোগিতা করতে পারি। আর যখন আমাদেরকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয় তখন আমরা তাদের পালটা চিঠির মাধ্যমে রিটের কথা জানিয়েছি। কিন্তু আমরাত রিটের কোন পক্ষ না। এখন রিট যদি খারিজ হয়েও থাকে তাহলে এটার খোঁজ রাখবে পরিবেশ অধিদপ্তর। আমরা না। তাছাড়া বিদ্যুৎ দিতে পরিবেশের যেমন ছাড়পত্র লাগে না তেমনই একক ভাবে গিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নও করতে পারি না।’

তবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘এ ফার্ম নিয়ে আমি নিজে চেষ্টা করে ব্যর্থ। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন সহযোগিতা মিলেনি। যে রীটের কথা তারা বলছেন তা অনেক আগেই খারিজ হয়ে গেছে। আর এতেই তারা ‘বেকুব’ বনে গেছেন। আসলে তাদের উদাসীনতার কারণেই এতো দিনেও বিষয়টি সমাধান হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ পরিবেশ দিবস। এ দিবস নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। অথচ আমরা একজন মানুষকেই পরিবেশগত সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারছি না। তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তর বিভাগের সকল মানুষের পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে কতটা কাজ করছে এটি পরিষ্কার। পরিবেশ দিবসে এসে যখন আমরা কোন মানুষের পরিবেশজনিত সমস্যায় কান্না দেখি তখন হতাশ হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। তা না হলে দিবস আসবে, দিবস যাবে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না।’

এদিকে গত ২৭ মে তারিখে মাহিশা পোল্ট্রি ফার্মের ব্যাপারে কেন কার্যকর পদক্ষেপ কেন নেওয়া হচ্ছে না তা জানতে চেয়ে ভুক্তভোগী আশরাফ আহমদের পক্ষে সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর আইনি নোটিশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ হচ্ছে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম করা। এখন তারা তাদের দায়িত্ব পালনে গেলে এর বিরুদ্ধে যদি আইনি কোন বাধ্যবাধকতা থেকে থাকে তাহলে ফার্মের মালিক সেটি উপস্থাপন করবেন। কিন্তু কোন বৈধ কাগজপত্র ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর বসে থাকতে পারে না।’

এদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক হুমায়ুন কবিরের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত হলাম। পরিবেশের মহা পরিচালককে অবগত করেন। আশা করছি এক সপ্তাহের ভিতর এটার একটি কার্যকর সমাধান আসবে।’


সূত্র: সিলেট ভয়েস

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ