Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-10-19T17:03:15Z
গোলাপগঞ্জলিড নিউজ

গোলাপগঞ্জে কমিউনিটি ক্লিনিকে ঝুলছে তালা, ব্যাহত চিকিৎসা সেবা

বিজ্ঞাপন


ফাহিম আহমদ : ভবনের ভিতরে-বাইরে সুন্দর রংয়ের কাজ। দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। একপাশে সামান্য তারকাটা। বাকি পাশগুলো খোলা। ক্লিনিকের জায়গায় বাঁশ পুঁতে কাপড় টাঙানো। নিরাপত্তার জন্য ছোট যে গেট সেটিও খোলা। গেটের উপরেও শুকানো হচ্ছে কাপড়। ভবনের দরজায় ঝুলছে একসাথে দু’টি তালা।

এ হলো গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের ফুলবাড়ি টিকরপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক। গত কয়েক সপ্তাহ থেকে ক্লিনিকটি বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা সিএইচসিপি জেবুন নাহার বেগম গত মাসের ২৫ তারিখ থেকে ৬ মাসের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। বাকি আছেন আরও দুইজন। একজন এইচএ কবরী দেব ও অন্যজন এফডব্লিউএ আবিদা সুলতানা।

কবরী দেবের সপ্তাহে তিনদিন ডিউটির কথা থাকলেও গত এক সপ্তাহের মধ্যে একদিনও তিনি ক্লিনিকে আসেননি; এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে তিনি দাবি করছেন গত শনিবারে এখানে এসেছেন।

অপরদিকে এফডব্লিউএ আবিদা সুলতানারও তিনদিন ডিউটি করা কথা। তবে কবে তিনি ডিউটিতে এসেছেন তাও মনে করতে পারছেন না। এদিকে সেবা গ্রহণ করতে না পেরে ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ। এই হচ্ছে ফুলবাড়ি টিকরপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের অবস্থা।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন বলছেন, ‘এরাতো প্রতিদিন এখানে ডিউটি করতে পারবে না। এদের তো মাঠ পর্যায়ে ডিউটি আছে।’

সরেজমিন মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে বন্ধের খবর পেয়ে ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, দুইটি তালা দিয়ে তালাবন্ধ রয়েছে ক্লিনিকের দরজা। মানুষ এসে ফিরে ফিরে যাচ্ছেন।


স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত প্রায় ১ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকটি। যে কারণে প্রতিদিন মানুষ এসে ফিরে যাচ্ছেন। কি কারণে বন্ধ রয়েছে তারা জানেন না। কবে খুলবে তাও তারা জানেন না। এজন্য প্রতিদিন আসছেন আর ফিরে যাচ্ছেন। সেবা গ্রহণ করতে না পেরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাজারো মানুষকে।

লালই বেগম নামে বয়োবৃদ্ধ একজন মহিলা বলেন, ‘গরীব মানুষ আমরা। তাপ-সর্দি হলে এখানে পাঁচ টাকা দিয়ে ঔষধ নেই। কয়েকদিন থেকে বন্ধ থাকায় ঔষধ নিতে পারতেছি না।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে ডালন আহমদ নামে এক মুরব্বি বলেন, ‘এভাবে যদি বন্ধ থাকে তাহলে মানুষ কি ধরণের সেবা ভোগ করবে। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ মহিলারা এসে কষ্ট করে ফিরে যান।’

ফুলবাড়ি ইউনিয়নের স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ইকবাল আহমদ বলেন, ‘গত ৪-৫ দিন থেকে ঘুরতেছি ঔষধদের জন্য। প্রতিদিন গিয়ে তালাবদ্ধ দেখতে পাই। সকাল হলে এলাকার মহিলারা এসে ফিরে যান।’

ফুলবাড়ি টিকরপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের এফডব্লিউএ আবিদা সুলতানা বলেন, ‘বর্তমানে আমরা দুইজন দায়িত্বে। তবে প্রায় সময় আমাদের মিটিং বা মাঠে কাজ থাকার কারণে আসতে পারি না। কবে ক্লিনিকে এসেছি ঠিক মনে করতে পারছি না।’

ফুলবাড়ি টিকরপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের এইচএ কবরী দেব বলেন, ‘আমি গত শনিবারে ক্লিনিকে গেছি। রবিবারে আমার ইপিএ ছিল। সোমবার ফিল্ড ছিল। আজকে মঙ্গলবার আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছি। আমি কিভাবে আসব আপনে বলুন তো।’ এলাকাবাসী কর্তৃক ক্লিনিক বন্ধ থাকার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসী বললে তো আর হবে না।’

ফুলবাড়ি টিকরপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি জেবুন নাহার বেগম, ‘গত মাসের ২৫ তাং থেকে আমি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছি। ৬ মাসের জন্য আমি ছুটি নিয়েছি। সন্তান জন্মের পর থেকে বিভিন্ন কারণে যে দুইজন বর্তমানে দায়িত্বে আছেন তাদের সাথে ঠিকমত আমার যোগাযোগ হয়নি। ক্লিনিক তারা খুলছেন কি না আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন বলেন, ‘এরাতো প্রতিদিন এখানে ডিউটি করতে পারবে না। এদের তো মাঠ পর্যায়ে ডিউটি আছে। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন দেয়া হয় সেখানে তাদের আসতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এদের তো মূল দায়িত্ব এটা না। এরা সময় পেলে গিয়ে খুলবে। ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর যে উনি আমাদের দায়িত্বে না। আর অন্যজন তারও আলাদা কাজ আছে। মানুষ দিব তো সরকারে। আমাদের তো অতিরিক্ত কোন মানুষ নেই। এজন্য দিতে পারতেছি না।’
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ