Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: সোমবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-10-25T15:39:09Z
সিলেট

যে চার সমস্যার চক্করে সিলেট নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে

বিজ্ঞাপন
সড়কে যানজটের কারণে অনেককে ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। এতে পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। রোববার সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার চিত্র।

ডেস্ক রিপোর্ট : গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দিনভর লেগে থাকে যানজট। প্রায় রাস্তা ভাঙাচোরা হওয়ায় ঝাঁকুনি সহ্য করেই যানবাহনে চলতে হয়। ঘরের ভেতরেও মশার কামড়ে শান্তিতে বসে থাকার জো নেই। পানিরও তীব্র সংকট বিভিন্ন এলাকায়। এই চার সমস্যার চক্করে পড়ে সিলেট নগরবাসীর দুর্ভোগ এখন চরমে। এমন অভিযোগ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।

গত এক সপ্তাহ নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের অন্তত অর্ধশতাধিক এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, সুরমামার্কেট, লামাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট ও কদমতলী এলাকায় যানজট সবচেয়ে বেশি। এসব স্থানে সকাল ১০টার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে যানজট লেগেই থাকে। প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই রয়েছে মশার উপদ্রব।

নগরের শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা চল্লিশোর্ধ্ব নাজমুল হোসেন গত শনিবার দুপুরে তাঁর বাসা থেকে রিকশাযোগে শিবগঞ্জ এলাকায় যাচ্ছিলেন। বেলা দেড়টার দিকে তাঁর সঙ্গে চৌহাট্টা এলাকায় কথা হয়। নাজমুল বলেন, ‘বাসা থেকে বেরোনোর পর প্রথম দফা কাজলশাহ এলাকায়, দ্বিতীয় দফা রিকাবিবাজার এলাকায় এবং তৃতীয় দফা চৌহাট্টা এলাকায় যানজটের কবলে পড়লাম। যে রাস্তা ১৫ মিনিটে পেরোনোর কথা, এখন পৌনে এক ঘণ্টায় একই দূরত্ব পেরিয়েছি। সামনে আরও কয়েক দফা হয়তো যানজটের কবলে পড়তে হবে।’

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় সড়কের বাঁ দিক সিগন্যালের আওতামুক্ত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘লেফট সাইট ক্লিয়ার’ বা ‘বাঁ দিক মুক্ত’। এতে সিগন্যালে কোনো যানবাহনকে বেশি সময় আটকে থাকতে হচ্ছে না। ফলে ওই এলাকায় যানজট কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। শিগগিরই একই পদ্ধতি নগরের নাইওরপুল ও রিকাবিবাজারেও প্রয়োগ করা হবে।

শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় ভাঙাচোরা সড়কে সারাক্ষণ ধুলা ওড়ে। এতে সড়কে চলাচলকারী মানুষ থেকে শুরু করে আশপাশের ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ফয়সাল মাহমুদ আরও বলেন, নগরের বন্দরবাজার এলাকার কোর্ট পয়েন্ট থেকে সুরমা মার্কেট পর্যন্ত ‘মিডল্যান্ড ডিভাইডার’ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে ইচ্ছা করলেই কোনো চালক এখন রাস্তার মধ্যে গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য পথে যেতে পারছেন না। এ পদ্ধতি চালুর কারণে ওই চালককে ওই সড়কের মোড় ঘুরেই তবে অন্য পথে যেতে হচ্ছে। এতেও যানজট কমছে। এ পদ্ধতিও আরও কিছু এলাকায় শুরু করা হবে।

নগরের বাসিন্দাদের মতে, যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। নগরের বাসিন্দা ও যানবাহনের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সে তুলনায় রাস্তাঘাটের সম্প্রসারণ কম ঘটছে। আবার নগরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অবাধে নিষিদ্ধঘোষিত ব্যাটারিচালিত ‘ইজিবাইক’ অবাধে চলছে। ফলে যানজটও বাড়ছে।

করেরপাড়া এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী সুমা তালুকদার বলেন, দিনরাতে সমানতালে মশা কামড়ায়। অথচ মশকনিধনের ওষুধ ছিটাতে সিটি কর্তৃপক্ষকে দেখা যায় না।

সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলছেন, নিয়মিতভাবে নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মশকনিধনের ওষুধ ছিটানো হয়। তবে শীতের মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ায় মশার উপদ্রবও বাড়বে। এটি বিবেচনায় নিয়ে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নগরের সব কটি এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

নগরবাসীর অভিযোগ, ভাঙাচোরা রাস্তার মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, পাঠানটুলা ও পুরাতন রেলস্টেশন এলাকা। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় ভাঙাচোরা সড়কে সারাক্ষণ ধুলা ওড়ে। এতে সড়কে চলাচলকারী মানুষ থেকে শুরু করে আশপাশের ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

শুকনা মৌসুমে ভাঙাচোরা সড়ক ধুলায় ধূসর। এর মধ্যে ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। গত সোমবার সকালে সিলেট নগরের আম্বরখানা-টিলাগড় সড়কের ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকার দৃশ্য।

এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে নগরের কাষ্টঘর, ঘাসিটুলা, মজুমদারপাড়া, লামাপাড়া, সোনারপাড়া, সেনপাড়া, শাপলাবাগ, হাতিমবাগ, বাগবাড়িসহ অন্তত অর্ধশতাধিক এলাকায়।

সিটি করপোরেশনের পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর জানান, কিছু এলাকায় পানিসংকট থাকলেও কোথাও তীব্র নয়। অন্তত সাড়ে তিন হাজার অবৈধ সংযোগকারীর কারণে সংকট তৈরি হচ্ছে। এসব সংযোগকারীর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। নগরে ১৭ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে চার কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে নগরের ৮ থেকে ১০ লাখ বাসিন্দার দৈনিক পানির চাহিদা কমবেশি ৮ কোটি লিটার। এর বিপরীতে ১টি পানি পরিশোধনাগার ও ৪০টি নলকূপের সাহায্যে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে সিটি কর্তৃপক্ষ।

সিটি করপোরেশেনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নগরের ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আম্বরখানা-শাহী ঈদগাহ সড়ক প্রশস্তকরণের অংশ হিসেবে বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ এবং নাইওরপুল-টিলাগড় সড়কের পানির সংযোগের কাজ শেষ করেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়ক পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এর বাইরে নগরের অন্যান্য ভাঙাচোরা সড়কের কাজও শুরু হবে। সড়ক পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

তথ্য ও ছবি : প্রথম আলো। 

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ