Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-11-14T12:00:53Z
সিলেট

সিলেটে বাবাকে গুম করতে চায় ছেলে !

বিজ্ঞাপন

ডেস্ক রিপোর্ট : সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করতে নিজের বাবাকে গুম ও মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছেন এক ছেলে। এমনকি শ্বশুরবাড়ির লোকজন নিয়ে আপন ভাইবোন ও বাসার ভাড়াটিয়াদের ওপর হামলাও করেছেন তিনি।

এছাড়া মিথ্যা মামলা দিয়ে ছোটভাই ও বোনকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। সেই মামলায় আসামি করেছেন জন্মদাতাকেও। নিজের ছেলের অব্যাহত হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী বাবাসহ পুরো পরিবার।

শনিবার (১৩ নভেম্বর) সিলেট নগরীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগী বাবা সিলেটের প্রবীণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী কাদর। তিনি নগরীর শাহী ঈদগাস্থ হাজারীবাগ ৩৭নং বাসার স্থায়ী বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি এমন সন্তানের বাবা না। মৃত্যুর পর ওই ছেলে ও পুত্রবধূ যেন আমার মরদেহ না দেখে। এমন কুলাঙ্গার সন্তান যেন কোনো বাবা-মার ঘরে না জন্মে।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমি মিনতি করছি আপনাদের কোনো দিন বাবা মার সাথে বেয়াদবি করবেন না। বাবা মাকে কষ্ট দেবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ আলী কাদর বলেন, আমি সিলেট নগরীর পরিচিত একজন ব্যবসায়ী। আমার তিন ছেলের নামে নগরীর শাহী ঈদগাহে একটি বাসা রয়েছে। জেলরোড ও মহাজনপট্টি এলাকায় আমার তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সন্তানদের দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে ছোট ছেলে আবদুল মোমিন ‘মেসার্স আলী মেশিনারিজ’, মেজো ছেলে আলী হাসান আমিন ‘মেসার্স আলী কর্পোরেশন’ ও বড় ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন ‘আলী এন্ড সন্স’ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে।

আলী কাদর বলেন, পুত্রবধূর চক্রান্তে আমার বড় ছেলে মামুন বাসাবাড়ি ও সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন দিয়ে আমার ছোট ছেলে ও বাসার ভাড়াটিয়াদের ওপর হামলা করিয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার এক ছেলে ও এক মেয়েকে কারাগারে পাঠিয়েছে। এখন তার অব্যাহত হুমকিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছি বাকি সবাই। যে কোনো সময় বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা করছি আমরা।

তিনি বলেন, ১৩ বছর আগে হেতিমগঞ্জের তুরবাগ এলাকার রমিজ আলীর মেয়ে পলি আক্তার প্রিয়ার সঙ্গে বড় ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে আমার সংসারে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। বউয়ের প্ররোচনায় বড় ছেলে আমার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজের নামে দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে।

 ২০১৬ সালে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে সংসারের বড় ছেলে হিসেবে ব্যবসায়িক সকল কাগজপত্র ও মূল্যবান সামগ্রী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংরক্ষিত স্থানে নিরাপদে রাখার জন্য তার হাতে তুলে দেই। সেই সুযোগে মামুন আমার ছোট ছেলে আবদুল মোমিন পরিচালিত প্রতিষ্ঠান জেল রোডস্থ ‘আলী মেশিনারীজ’ এর জমিদারকে ভুল বুঝিয়ে দোকানের সকল কাগজপত্রে নিজের নাম লিখে নেয়। পরে জমিদার পরবর্তীতে মামুনের প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। এ বিষয়ে মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।

আলী কাদর বলেন, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে মামুন বাসায় আমার স্ত্রীকে (তার মাকে) গালাগাল, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও বেয়াদবিমূলক আচরণ করে। আমার স্ত্রী যাতে বিষয়টি আমাকে ফোনে জানাতে না পারেন তাই বাসায় থাকা মোবাইল ফোনের সুইচ অফ করে খাটের নিচে ফেলে রেখে স্ত্রীসহ স্বেচ্ছায় ওইদিন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। তারপর থেকে মামুন স্ত্রীসহ নগরীর ফরহাদ খাঁ পুলস্থ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছে।

আলী কাদর আরো বলেন, মামুন স্ত্রীসহ অন্যত্র যাওয়ার পর থেকে শাহী ঈদগাহস্থ তিন ছেলের নামে বন্টনকৃত বাসাটি দখলের চেষ্টা করে। গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ বহিরাগত লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে আমার বাসার ভাড়াটিয়া এবং ছোটো ছেলে আবদুল মুমিনের উপর অতর্কিতভাবে হামলা করে রক্তাক্তভাবে জখম করে। 

পরে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে বড় ছেলে মামুন পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসী হামলার দুইদিন পর ৩ নভেম্বর সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় বর্তমানে আমার মেজো ছেলে আলী হাসান আমিন (৩০) এবং মেয়ে আফসানা বেগম শিমু (৩৮) জেলহাজতে রয়েছে। সেই মামলায় আমাকেও আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে সেই মামলায় আমি, আমার ছোট ছেলে আব্দুল মুমিন, ভাতিজা সাহেদ আলী, আমাদের গাড়ি চালক কাওসার আহমদ জামিনে রয়েছি।

বড় ছেলের হুমকিতে আতঙ্কগ্রস্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি হার্টের রোগী, দুটি রিং বসানো। বড় ছেলের একের পর এক আচরণে এখন আমি আরও আতঙ্কগ্রস্ত। এর আগে একাধিকবার মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখে কোতোয়ালি এবং এয়ারপোর্ট থানায় জমা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু মামুন খবর পেয়ে আমাকে লাঞ্ছিত করে। এমনকি থানায় অভিযোগ দিলে আমাকে মাদক মামলায় ফাঁসানো ও গুম করবে বলেও শাসিয়ে দেয়। তার এমন উদ্যত আচরণে আমি এবং আমার পরিবারের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ আলী কাদরের স্ত্রী রুকসানা বেগম, পুত্রবধূ শাহানা আক্তার, ইকরা জান্নাত মীম, ছোট ছেলে আব্দুল মুমিন।


সংবাদ সূত্রে : সময় নিউজ 
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ