Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২
সর্বশেষ সংষ্করণ 2022-04-23T12:13:14Z
লিড নিউজসিলেট

রাস্তায় ভ্যান রাখায় চালককে বেত্রাঘাত করলেন সিসিক মেয়র আরিফ

বিজ্ঞাপন

ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এবার সিগারেট কোম্পানির ভ্যান গাড়ির চালককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে নগরীর চৌহাট্টা এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে বসে রুবেল নামের এক ভ্যান চালককে লাঠি দিয়ে মারেন মেয়র আরিফ।

এই ঘটনার ছবি সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নগরবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে কারও শরীরে হাত তোলার অধিকার মেয়রের নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নগরীতে মেয়র আরিফ ও সিসিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হকার ও শ্রমজীবী মানুষজনকে প্রকাশ্যে মারধরের অভিযোগ রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে নগরীর জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্টার দিকে মেয়র আরিফের গাড়ি যাচ্ছিল। চৌহাট্টায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সামনে সিগারেট কোম্পানির ভ্যানগাড়ির চালক রাস্তার পাশের দোকানে সিগারেট ডেলিভারি দিতে যান। ভ্যানগাড়ি পার্কিং দেখে মেয়র আরিফ গাড়ি থামিয়ে ভ্যানচালককে ডেকে নেন। এ সময় মেয়রের গাড়ির পাশে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিসিক কর্মীও লাঠি হাতে অবস্থান নেন। মেয়র আরিফ নিজের গাড়িতে বসে লাঠি বের করে ভ্যান চালকের হাতে আঘাত করেন এবং পার্কিংয়ের জন্য তাকে শাসিয়ে দেন। এই ঘটনার সময় মেয়রের গাড়ি বহরে থাকা আনসারের সদস্যও পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। 

এদিকে কয়েক গজ সামনে আরেকটি সাদা রঙের প্রাইভেটকারসহ রাস্তার পাশে আরও অনেক ব্যক্তিগত গাড়ি অবৈধভাবে পার্কিং করা থাকলেও তাদের কোনো কথা না বলে মেয়র আরিফ চলে যান। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিগারেট কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সমকালকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। প্রতিবাদ করলে উল্টো বিপদ হবে। মেয়র জিন্দাবাজারে রিকশা ঢুকতে দেন না। এ নিয়ে মুখ খুললে ভ্যানগাড়ি প্রবেশও বন্ধ করে দেবেন। এমন হলে চাকরি থাকবে না।’ 

অতীতেও তিনি মারধর করেছেন দাবি করে ওই বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘আমাদের জীবিকার প্রয়োজনে এসব সহ্য করতে হয়। এসব রাস্তা বন্ধ হলে ক্ষতি হবে।’ তারা জিম্মি বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

এই ঘটনার পর হযরত বিনয় ভদ্র নামে এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে ভ্যানচালককে মারার ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, 

‘একজন নিপীড়ক মেয়র এবং আমাদের বিবেক।'
২৩.০৪.২২ চৌহাট্টা, সিলেট। 
একজন সিগারেট কোম্পানির কর্মচারী ভ্যান রেখে ডেলিভারি দিতে গেছেন পাশের দোকানে। সেই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো মেয়রের গাড়ি। তাকে দেখে এই ভ্যানচালক ভ্যান সরিয়ে নিতে গেলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাকে হাত পাততে বলেন এবং উনার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে দুটে বাড়ি দেন। কিন্তু একটু সামনেই রাস্তার পাশে একটি প্রাইভেট কার পার্ক করা ছিল, কিন্তু কবি সেখানে নীরব। এই শহরের অনেক রিকশা চালক ও খেটেখাওয়া মানুষের পিঠ খুঁজলে মেয়র আরিফের লাঠির আঘাতের অনেক দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ  : এই ছবি সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় উঠে। সাংবাদিক ও কলামিস্ট আ ফ ম সাঈদ লিখেছেন, ‘মেয়র আরিফের এহেন কাজ জঘন্য ও অসভ্যতামূলক। তীব্র নিন্দা জানাই।’ 

সাংবাদিক একুশ তাপাদার লিখেছেন, ‘কারও গায়ে হাত তোলার অধিকার তাকে কে দিল? দেশে কি আইন নাই! এটা কি বর্বর যুগ?’ 

তানভির রুহেল লিখেছেন, ‘অসভ্য সমাজের অসভ্য মেয়র।’ 

রাজিব রাসেল লিখেছেন, ‘দরিদ্র শ্রমজীবীদের ক্ষমতা দেখানো সহজ।’ 

হযরত বিনয় ভদ্রের স্ট্যাটাস শেয়ার দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ লিখেছেন, ‘কাজটি সঠিক নয়।’ 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘একজন যত বড় অপরাধীই হোক, কারও গায়ে হাত তোলার সুযোগ নেই। এটা পরিষ্কার মানবাধিকার লঙ্ঘন, বেআইনি কাজ। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি কারও গায়ে হাত তুলতে পারেন না।’ 

নগরীর জিন্দাবাজার এলাকাকে রিকশামুক্ত রাখতে সিটি করপোরেশন নিযুক্ত কর্মীদের বিরুদ্ধে রিকশা চালক-যাত্রীদের মারধর ও অশালীন আচরণের অভিযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিসিকের চতুর্থ শ্রেণির কোনো কর্মচারী যদি এসব করত, তাহলে মেয়রের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়ার কথা। অথচ উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, যা তীব্র নিন্দনীয় বিষয়। তিনি বলেন, সিগারেট বিক্রি তো দেশের আইন অনুযায়ী অপরাধ নয়। সরকারের রাজস্ব আদায়ের বড় খাত সিগারেট। 

নগরীতে যত্রতত্র অবৈধ পার্কিংয়ের দৌরাত্মের পরও শ্রমজীবী ভ্যানগাড়ি ও রিকশাচালকদের উপরে নির্যাতন কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। গৌতম মন্ডল নামে একজন লিখেছেন, ‘আইন কোথাও সমান না, শক্তের ভক্ত নরমের যম।’ 

আহমেদ শিপলু নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘বডি টাচ সমর্থনযোগ্য নয়। এখানে পাজেরো গাড়ি পার্ক করলে, সেই গাড়ির চালক বা যাত্রীকে নামিয়ে এ রকম মারতে পারতেন?’ 

এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল কল ধরেননি।

সূত্র : সমকাল
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ