Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বুধবার, ৮ জুন, ২০২২
সর্বশেষ সংষ্করণ 2022-06-08T15:33:01Z
সিলেট

সিলেটে মৃত্যুকূপেই সুখনিদ্রা !

বিজ্ঞাপন

ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটে চরম ঝুঁকির মাঝেও টিলার পাদদেশে গড়ে তোলা হয়েছে বসতি। বর্ষায় বসতিগুলো হয়ে ওঠে মৃত্যুকূপ।

বৃষ্টিবহুল অঞ্চল সিলেটে মৌসুম ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ভারী বর্ষণ হয়ে থাকে। যে কারণে টিলার মাটি নরম হয়ে বসতঘরের ওপর পড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

দুর্ঘটনার আশঙ্কা জেনেও ঠেকানো যাচ্ছে না মৃত্যুকূপে মানুষের বসবাস। মাথা গোঁজার ঠাঁই ধরে রাখতে মানুষ ঝুঁকির মাঝে বসবাস করছেন।

কিন্তু এদের নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসনের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদিও বিগত দিনে টিলা ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে অনেক।

সর্বশেষ সোমবার (৬ জুন) ভোরে সিলেটের জৈন্তাপুরে টিলা ধসে একই পরিবারের ৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরপর টনক নড়ে প্রশাসনের। টিলার পাদদেশে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়। অথচ এর আগেও ১৪ মে ভোরে সিলেটের গোলাপগঞ্জে টিলার মাটি ধসে ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রাণ হারান সাবেক শিক্ষক এনজিও কর্মী অপু লাল রায় (৩০)। 

এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়নে টিলা ধসে ৬টি বসতঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে চেয়ারম্যান লেইস চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিপাত হওয়ায় টিলার মাটি নরম হয়ে বাড়ির ওপরে ধসে পড়ে। সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেটের জৈন্তাপুরে এখনো অসংখ্য পরিবার টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বাড়িগুলোতে বসবাস করছেন। এছাড়া নগরী সংলগ্ন সদর উপজেলার বালুচরেও অসংখ্য পরিবার টিলার অর্ধেকাংশ কেটে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন।

এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসন মো. মজিবর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণে টিলা ধসের আশঙ্কা থাকে। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে টিলার পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে। এরইমধ্যে উপজেলাগুলোতে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি জৈন্তাপুরে টিলা ধসে ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর আরো ১৫ পরিবারকে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম।  

তিনি  বলেন, অনেকে ঝুঁকিতে থাকলেও চুরি হওয়ার ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে সরতে চাচ্ছেন না। এরপরও মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে প্রতিটি উপজেলায় সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া ছাড়াও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত আমজেরী হক বাংলানিউজকে বলেন, খাদিমপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে টিলার পাদদেশে বসবাসকারী ঝুঁকিতে থাকা ৭টি পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে মাইকিং করে এলাকার লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে।  

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন  বলেন, ভারী বর্ষণে উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়নে টিলা ধসের ঘটনা ঘটলেও মানুষজনের কোনো ক্ষতি হয়নি। অবশ্য এলাকাগুলোতে মাইকিং করে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। যারা ঝুঁকিতে বসবাস করছেন তাদের সরিয়ে নিতে চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বর্ষার আগেই সিলেটে এবার বন্যা দেখা দেয়। আর সাম্প্রতিক বন্যার পর ফের প্রবল বর্ষণে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। অতি বর্ষণে দেখা দিয়েছে পাহাড়-টিলা ধস।  

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে প্রতিদিন ভারী বর্ষণ হচ্ছে। তবে, আগামী ১১,১২,১৩,১৪ ও ১৫ জুন প্রবল বর্ষণ হবে। যে কারণে টিলা ধসের আশঙ্কা থেকেই যায়। ফলে টিলার পাদদেশে বসবাসকারী জনসাধারণকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়টিলার পাদদেশে অন্তত; ১০ সহস্রাধিক পরিবার বসবাস করছেন। অথচ তাদের সরিয়ে নিতে কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। কেবল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেই হাঁকডাক পড়ে। তাছাড়া ঝুঁকিতে থাকা বসবাসকারীরাও নানা কারণে সরতে চাননা। বর্ষায় ভারী বর্ষণে পাহাড় টিলা ধস দেখা দিলেই মাইকিং করিয়ে হাঁকডাক ও নির্দেশনার মধ্যে প্রশাসনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকে।  

সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট তথ্যমতে, সিলেট বিভাগে টিলার পাদদেশে হাজার হাজার লোক ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানির ঘটনা ঠেকাতে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।  

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০২ সালে শাহী ঈদগাহ এলাকায় ৪ জন, ২০০৫ সালে গোলাপগঞ্জে টিলা ধসে একই পরিবারের ৩ জন, ২০০৯ সালে মৌলভীবাজারে জেরিন চা বাগানে পাহাড় ধসে ৩ জন, একই বছরের ১০ অক্টোবর গোলাপগঞ্জের কানিশাইলে মাটি চাপায় ১ শ্রমিক মারা যান। ২০১৪ সালে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দেয়াল ধসে একই পরিবারের ৩ শিশুর মৃত্যু হয়। আর জৈন্তাপুরে পাহাড় ধসে মারা যান আরও ২ শিশু। সর্বশেষ মে মাসে গোলাপগঞ্জে টিলা ধসে মারা যান এক এনজিও কর্মী। সোমবার (৪ জুন) জৈন্তায় টিলা ধসে মারা যান নারী-শিশুসহ একই পরিবারের ৪ জন। ২০১১ সালে আদালতের একটি রিটে সিলেটে ১ হাজার ২৫টি টিলার তথ্য পাওয়া যায়। তবে জেলা প্রশাসনে এর কোনো পরিসংখ্যান নেই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় ২শ টিলার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এসব টিলার অনেকটিই সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ টিলা অর্ধেক ও আংশিক কেটে ফেলা হয়েছে। আর টিলা কাটা অব্যাহত থাকায় বর্ষায় ধসে পড়ার ঝুঁকি আরো বাড়ছে।  

সৌজন্যে : বাংলা নিউজ
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ