Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২
সর্বশেষ সংষ্করণ 2022-12-24T15:22:54Z
সিলেট

শীত আসতেই সিলেট অঞ্চলে চোর ‘আতঙ্ক’

বিজ্ঞাপন

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রায় ৬ মাস আগে পরপর দু’দফা বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সিলেট। এতে কৃষকরা ক্ষতির মুখোমুখি হন। অনেকেরই গবাদি পশু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে উজানের ঢল। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা ফের জেগে ওঠেন। তবে এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি বন্যার ধকল। এই অবস্থায় শীত মৌসুম শুরু হতে না হতেই কৃষকরা পড়েছেন নতুন শঙ্কায়। সংঘবদ্ধ চোরচক্র রাতের আঁধারে নিয়ে যাচ্ছে গবাদি পশু। এ কারণে সিলেটের কৃষকদের মধ্যে চোর আতঙ্ক বিরাজ করছে। গেল কয়েক দিনে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। শীত জেঁকে বসেছে সিলেটে।

কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে গ্রামীণ জনপদ। প্রতি বছরই শীত মৌসুমে সিলেট অঞ্চলে চুরি ও ডাকাতি বেড়ে যায়। এবার চোর চক্র ছোট ট্রাক নিয়ে কৃষকের তালা ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে গবাদি পশু। পরপর কয়েকটি ঘটনার পর সতর্ক হয়েছে প্রশাসনও। সিলেটের ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের মধ্যবর্তী গ্রাম নরশিরপুর। গোয়ালাবাজারের কাছাকাছি এলাকা হলেও ওই গ্রাম বালাগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত। গ্রামের কৃষক সানুর মিয়া বৃহস্পতিবার রাত ১২টায়ও গোয়ালে থাকা গরুগুলো দেখে এসেছেন। ভোরে দেখেন গোয়ালঘরের তালা খোলা। গিয়ে দেখে চারটি গরু নেই। রাতে তালা ভেঙে গরুগুলো চোরেরা নিয়ে গেছে। গ্রামের অনেকেই বলাবলি করছেন- ছোট একটি ট্রাকে করে গরু নিয়ে যেতে দেখেছেন।

 গতকাল সকাল থেকে গরুর খোঁজে হন্য হয়ে ঘুরছেন সানুর মিয়া। সানুর মিয়া জানান- গরুর খোঁজ এখনো পাননি। মধ্যরাতে গরুগুলো গোয়ালে ছিল। ভোরে উঠে দেখেন নেই। রাস্তার পাশে বাড়ি হওয়ার কারণে ট্রাকে করেই তার গোয়ালের গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে জানালেও এখনো গরুগুলোর কোনো হদিসই পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- তাজপুরের খাসিকাপন গ্রামের গেদু মিয়া নামের এক কৃষকের গরু চুরি হয়েছে। চোরেরা একই কায়দায় ওই কৃষকের একটি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। এদিকে গত বুধবার রাতে উপজেলার সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জের দুই কৃষকের ১১টি গরু চুরি হয়েছে। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে মসজিদে মাইকিং করায় গরু রেখে পালিয়ে যায় চোরচক্র। গত বুধবার দিবাগত রাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর কলাবাড়ী থেকে ১১টি গরু চুরি হয়। চুরি হওয়া গরুগুলোর মূল্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। প্রতিদিনের মতো রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরুগুলোকে গোয়ালঘরে বেঁধে রেখে যান কৃষক মহিবুর রহমান ও মখলিছুর রহমান।

তারা ফজর নামাজের পর গরুগুলোকে খেতে দিতে গিয়ে দেখেন গোয়ালঘরে গরু নেই। আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও গরু না পেয়ে পুলিশকে জানানো হয়। চুরি হওয়া গরুর মালিক জানিয়েছেন- রাতে চোরেরা আমার গোয়ালঘরে রাখা দুইটি গাভী, একটি বকনা ও দুইটি বাছুর চুরি করে নিয়ে যায়। গরুগুলোর মূল্য গ্রায় ২ লাখ টাকা। আরেক ভুক্তভোগী কৃষক মখলিছুর রহমান জানান- বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমার ৬টি গরু গোয়ালেই বাঁধা ছিল। সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি গোয়ালঘরে গরুগুলো নেই। চুরি যাওয়া ছয়টি গরুর মূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এদিকে শান্তিগঞ্জে গরু চুরি বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এ কারণে অনেক কৃষকই রাত জেগে তাদের গবাদি পশু পাহারা দিচ্ছেন। গত বুধবার দিবাগত রাত অনুমান ৩টার দিকে শান্তিগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা বড় বাড়ীর মৃত হাফিজ ছদরুন নুরের ছেলে রইছ মিয়ার ৪টি গরু গোয়াল ঘর থেকে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরেরা।

 চোরের উপস্থিতি বুঝতে পেরে রইছ মিয়া স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেবকে ফোন করে মাইকিং করার জন্য বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে আস্তমাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি মসজিদে মাইকিং হলে এবং গ্রামের লোকজন চারদিকে বেরিয়ে পড়লে সংঘবদ্ধ চোরেরা কামরুপদলং মাদ্রাসার সামনে ২টি গরু, কামরুপদলং কান্দির উত্তর পাশে ১টি এবং নাইন্দা নদীর পাশে ১টি গরু ফেলে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী জানান, কয়েকদিন আগে সদরপুর গ্রামের মনসুর আলীর ৩টি, আব্দুল হান্নানের ১টি, ওয়াহিদ আলীর ২টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরেরা। এ ছাড়া গত কয়েকদিন আগে সুলতানপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী অন্ধ মহিলার ১টি গাভী চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। কয়েকদিন পর ওই মহিলা স্থানীয় জাউয়া বাজারে ভিক্ষা করতে গেলে চোরচক্র বাজারে তোলে গাভীটি বিক্রি করার জন্য। তখন গাভীটি ওই অন্ধ মহিলাকে দেখামাত্র তার পাশে চলে আসে চোরেরা কোনোভাবেই গাভীটিকে নিতে পারছিল না। তখন স্থানীয়দের সহযোগিতায় গাভীটিকে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে কৃষকদের আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন- গরু চুরি প্রতিরোধ করতে পুলিশ কাজ করছে। চোর চক্রকে পাকড়াও করতে সিলেট ও সুনামগঞ্জে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সূত্র : মানবজমিন 


বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ