Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-02-27T18:40:55Z
লাইফস্টাইল

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবার হাঁস ও বাঁশের কোড়ল

বিজ্ঞাপন

বাঁশ আমাদের সকলের কাছে একটি অতি পরিচিত ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। বাঁশের গুনাগুন শেষ করার মত না। বাঁশের সকল গুনের সাথে আমাদের পরিচয় নেই।বাঁশ দিয়ে ঘর বাড়ি আসবাবপত্র তৈরি প্রভৃতি কাজের পাশাপাশি বাঁশ রান্না করে খাওয়াও যায়। যেমন বাঁশ কোড়ল সবজি, হাঁস-বাঁশ ইত্যাদি।

বাঁশের বিস্তৃতি অত্যন্ত ব্যাপক।পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কমবেশী এটি জন্মায়। এ দেশের বিশেষ করে গ্রামীন জনগোষ্টির কাছে বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম। গৃহ নির্মাণ, মঞ্চ নির্মাণ, মই, মাদুর, ঝুরি, ফাঁদ , হস্তশিল্প সহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য বিবিধ জিনিসপত্র তৈরির কাজে বাঁশের রয়েছে বহুল ব্যবহার।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমানোর ক্ষেত্রে বাঁশের মত এক ক্ষমতাশীল দ্বিতিয়টি নেই, অবিশাস্যভাবে বাঁশ অন্য সব গাছপালার চেয়ে বেশী অক্সিজ্ন উৎপন্ন করে এবং অন্য যে কোন উদ্ভিদের চেয়ে বেশী পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহন করে।

এতসব গুনের পরেও যে বাঁশ দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়া যায় তা অনেকেই বোধহয় জানেন না। কিন্তু বাঁশ দিয়ে হাঁসরান্না করা খাবার সিলেটের একটি অতি পুরাতন খাবার যা সিলেটিদের অনেক আগেই পাহাড়িরা বা অন্য জাতি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করত।

যদিও হাঁস-বাঁশ খাবারটি সিলেটি খাবার হিসেবে বেশী মানানসই, তারপরেও অন্যান্যজাতীগোষ্টিরা শুধু বাঁশের কচি মোচা খাওয়ার কথা শোনা যায়। হাঁস দিয়ে বাঁশ রান্না শুনতে অবাক লাগলেও এটি সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার।

সিলেটের খাবারের মধ্যে এটি অন্যতম একটি সুস্বাদু খাবার। যারা একবার হাঁস-বাঁশের রান্না খেয়েছেন, তাঁরাই এর স্বাদের গুনাবলী বুজতে পেরেছেন। তবে অনেক সিলেটিরাই এটা সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না।

বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের অনেকেই এ মজাদার খাবার সম্পর্কে জানে না।তার প্রধান একটি কারণ বাঁশের মোচা বা সিলেটি আঞ্চলিক ভাষায় ‘করিল’ এর সল্পতা।

কচি বাঁশ খাদ্য হিসেবে খেতে শুরু করছিল কারা বা কোন জনগোষ্টি তা সঠিকভাবে জানার উপায় নেই। তবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য প্রমান থেকে পাওয়া যায় চাইনিজদের খাদ্য হিসেবে কচি বাঁশ খাওয়ার ইতিহাস বেশ পুরোনো।

পরে ধীরে ধীরে চাইনিজদের থেকে কচি বাঁশ খাওয়ার প্রবনতা ছড়িয়ে পরে অন্যান্য জনগোষ্টিতে। বিশেষ করে মোঙ্গলদের মধ্যে।যাযাবর মোঙ্গলয়েডদের কাছ থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জনগোষ্টিতে।

বর্তমানে এই কচি বাঁশ বা কোরল বিভিন্নদেশের বিভিন্ন জনগোষ্টির খাবারের মধ্যে প্রচলন রয়েছে। তবে নির্দিষ্টভাবে বলার তেমন উপায় নেই যে বাঁশ কোড়ল আসলে চায়নিজ, মোঙ্গল বা সিলেটিদের খাবার।

যাই হোক এবার চিনে নেই নিজের দেশের বিভিন্ন ধরনের বাঁশ কোড়ল। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের হাঁস-বাঁশ একটি জনপ্রিয় খাবার। অন্যান্য অঞ্চল বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে সিলেটিদের মত হাঁস দিয়ে বাঁশ রান্না হয় না বা খুব কম।

তারা বাঁশ কোড়ল দিয়ে পুঁই শাক, শুটকি দিয়ে বাঁশ কোড়ল ভাজি ইত্যাদি রান্না করে খায়। যেহেতু বাঁশ কোড়ল দিয়ে সিলেটিদের হাঁস-বাঁশ বেশী জনপ্রিয় তাই এর প্রস্তুত প্রনালী নিয়ে আলোচনা করব।

* হাঁস-বাঁশ রান্নার উপকরন :

→ আড়াই কেজি ওজনের হাঁস।
→ বাঁশ কোরল কুচি ২৫০ গ্রাম।
→ পেয়াজ কুচানো তিনটা।
→ আদাবাটা ৩ টেবিল চামচ।
→ রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ।
→ জিরাগুরা পরিমান মত।
→ গরম মসলা পরিমান মত।
→ হলুদ মরিচ পরিমান মত।
→ কাঁচা মরিচ ১০টি।
→ পাঁচফোড়ন ও লবন পরিমান মত।
→ অল্প সরিষা।
→ সয়াবিন তেল ২৫০ গ্রাম।
→ স্বাদের জন্য তিনটি টমেটো দেওয়া যাবে।

* প্রনালী : 

কড়াইয়ে তেল গরম করে গরম তেলে কুচানো পেয়াজ ছাড়তে হবে। পেয়াজ একটু নরম হলে আদা রসুন ও সরিষা ছেড়ে দিয়ে নাড়তে হবে। তারপর একটু ভাজা ভাজা হলে হলুদ, জিরা, মরিচ, গরম মসলা দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে।

এরপর কড়াইতে অল্প পরিমান পানি দিয়ে চামড়া ছড়ানো হাঁসের মাংস ছোট ছোট টুকরা করে কড়াইতে ঢেলে দিতে হবে।মাংস সিদ্ধ হলে কাচামরিচ ও বাঁশকুচি ঢেলে কড়াই ঢেকে কম আঁচে কিছুক্ষন রাখতে হবে।

তারপর পাঁচফোড়ন কড়াইতে ছড়িয়ে দিয়ে মিশিয়ে কিছুক্ষন রেখে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। হয়ে গেল হাঁস-বাঁশ রান্না। এবার ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন। মনেই হবে না যা খাচ্ছেন তা কিন্তু আস্ত একখান ‘বাঁশ’।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ