বিজ্ঞাপন
![]() |
শরীফগঞ্জ পশু হাসপাতাল। ছবি : জি ভয়েস টোয়েন্টিফোর |
ফাহিম আহমদ: হাসপাতাল ভবনের গেইটি এখনও দেখতে বেশ ভাল। দূর থেকে দেখলে মনে হয় হাসপাতালের ভিতরটিও হবে বেশ পরিপাটি। কিন্তু না, বিষয়টি ঠিক তার উল্টো। এ যেন সাপ-বিচ্ছুর বাসস্থানে পরিণত হয়েছে গোলাপগঞ্জের শরীফগঞ্জ পশু হাসপাতাল।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউনিয়ন হাকালুকি হাওর পারে অবস্থিত। হাওরের পারে এ ইউনিয়নের অবস্থান হওয়ায় এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। উপজেলার এ ইউনিয়নটিতে সর্বাধিক মানুষ গবাদিপশু পালন করে থাকেন। ফলে এলাকার গবাদিপশুর চিকিৎসার জন্য নির্মিত হয়েছিল ‘শরীফগঞ্জ পশু হাসপাতাল’। তবে চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। যে কারণে সেখানকার মানুষ গবাদিপশুর যে কোন ধরণের চিকিৎসা সেবা পেতে বঞ্চিত।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে পশু হাসপাতালটি স্থাপিত হয়। চালু হওয়ার পর কিছুদিন কোনমতে চললেও গত ৭-৮বছর ধরে লোকবল সংকটের কারণে হাসপাতালটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। তবে এক বছরের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসক দেয়া হবে বলে জানান- উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন বন্ধ থেকে হাসপাতালটি এখন পরিত্যক্ত ধ্বংসস্তূপে রূপ নিয়েছে।
বেশ কয়েকজন এলাকার মানুষের সাথে কথা হলে তারা বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার অবহিত করার পরও কোন সমাধান হচ্ছে না। এজন্য তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দায়িত্বশীলদের অবহেলা এর পিছনে বড় কারণ বলে তারা মনে করেন।
হাসপাতালটির খোঁজ নিতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিতভাবে পড়ে থাকায় হাসপাতালের ঘরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। চারিদিকে আবর্জনা-আগাছায় ভরপুর। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় হাসপাতাল ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। জং ধরে নষ্ট হয়ে গেছে ভবনের টিন। হাসপাতালের চারিদিকের দেয়ালও জরাজীর্ণ অবস্থা। হাসপাতালে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও চুরি হয়ে গেছে। হাসপাতালটি দেখে বুঝার উপায় নেই এখানে একটি পশু হাসপাতাল ছিল। এক কথায় হাসপাতালটি আবারও চালু হলে সবকিছু নতুন করে তৈরি করতে হবে।
স্থানীয় কৃষক কামাল মিয়া জানান, দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালটি বন্ধ। এ অবস্থায় গবাদিপশু অসুস্থ হলে চিকিৎসাসেবা দিতে বেগ পেতে হয়৷ চিকিৎসার অভাবে এলাকার অনেক গরু-ছাগল মারা গেছে। তিনি হাসপাতালটি চালু হওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
রহিম উদ্দিন নামের আরেক কৃষক জানান, কোন গবাদিপশু অসুস্থ হলে চিকিৎসাসেবা নিতে আমাদের নদী পাড়ি দিয়ে অনেক কষ্ট করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল নিয়ে যেতে হয়। এ অঞ্চলে কোন ডাক্তারকেও নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। হাসপাতালটি বন্ধ হওয়ার পর শুধুমাত্র চিকিৎসার অভাবে অনেকে পশু পালন বন্ধ করে দিয়েছেন।
স্থানীয় খাটকাই এলাকার তরুণ সমাজসেবক জাবেদুর রহমান রিপন জানান, ‘আমাদের কষ্ট লাগে তখন, যখন দেখি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে জরুরি সেবা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হয়। দীর্ঘ প্রায় ৭-৮ বছর ধরে হাসপাতালটি বন্ধ থাকার কারণে অনেক পশু পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার পরিবর্তে নিঃস্ব হয়েছেন। অনেক সময় গরু ছাগলের বিভিন্ন অসুখ দেখা দেয়। কৃষকরা তাদের শেষ সম্বল গরু-ছাগল ভালো চিকিৎসার অভাবে হারাতে হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের মূল অফিসে যেখানে ১১ জন লোক থাকার কথা সেখানে আমিসহ মাত্র ৩ জন লোক আছে। যদি এখানে লোক বেশি থাকতো তাহলে ওই হাসপাতালে একজন লোক দিতে পারতাম৷ আর এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় লোক নিয়োগ হবে, আমাদের ওখানেও হবে৷ তখন লোক দেয়া যাবে।
৩ জন লোক কতদিন থেকে কাজ করছেন জবাবে তিনি বলেন, প্রায় ৭-৮ মাস থেকে আমরা কাজ করছি। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় একেকজন ছুটিতে চলে যান।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় বসার কোন পরিবেশ নেই। হাসপাতালটি মেরামত করার পর চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।