বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটে জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রত্যাহার এবং বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়াসহ ছয় দফা দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বস্তরের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আজ সোমবার সন্ধ্যায় নগরের বারুতখানা এলাকার একটি রেস্তোরাঁ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ হতে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম। তিনি জানান, সিলেটের ইজারা বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া ও সিলেটের জেলা প্রশাসকের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে এ ধর্মঘট পালিত হবে। তবে ধর্মঘটে পরীক্ষার্থী বহনকারী গাড়ি ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত পরিবহন আওতামুক্ত থাকবে।
এর আগে গত বুধবার সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আয়োজনে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ওই সময় এই ধর্মঘট কর্মসূচির ঘোষণা দেন পরিবহন শ্রমিকেরা। সে সভায় উপস্থিত হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে সিলেটের জেলা প্রশাসককে ‘ব্যর্থ ও অদক্ষ’ দাবি করে তাঁর পদত্যাগ চেয়ে বক্তব্য দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। তবে বক্তব্যে তিনি পরিবেশের ক্ষতি করে পাথর উত্তোলনেরও বিরোধিতা করেন।
লিখিত বক্তব্যে পরিবহন শ্রমিক নেতা ময়নুল ইসলাম বলেন, সিলেটের গণপরিবহন, পণ্যপরিবহন ও পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিকরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই বিভিন্নভাবে বঞ্চিত, অবহেলিত। ২০১৮ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় সিলেটের সব পাথর কোয়ারি। এতে লাখো মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে বারবার আন্দোলন-সংগ্রাম করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পরেও জুলুম-নির্যাতনের ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পাওয়া যায়নি। তাই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
ছয় দফাগুলোর মধ্যে আছে– সিলেটের সব পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল এবং পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া; বিআরটিএ কর্তৃক গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণপরিবহনের ওপর আরোপিক বর্ধিত ট্যাক্স প্রত্যাহার; সিলেটের সব ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বন্ধ, বিদ্যুতের মিটার ফেরত ও ভাঙচুর করা মিলের ক্ষতিপূরণ; সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে প্রত্যাহার এবং বালু-পাথরসহ পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানি না করা।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস, ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান, সিএনজি, ইমা লেগুনা ও পাথর-সংশ্লিষ্ট মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সিলেট জেলাজুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এদিকে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া এবং জেলা প্রশাসকের অপসারণসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত শনিবার থেকে পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিকেরা ধর্মঘট শুরু করেন। পণ্য পরিবহন মালিকদের ধর্মঘট চলাকালে জামায়াতে ইসলামীপন্থী পরিবহন মালিকেরা এ কর্মসূচির সঙ্গে মালিক-শ্রমিকদের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে এক জরুরি বৈঠক করেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টায় দক্ষিণ সুরমা বাস টার্মিনালে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ব্যানারে আয়োজিত এ সভা শেষে এমন তথ্য জানানো হয়।
সভা শেষে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য লোকমান আহমদ জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে তাঁদের গাড়ি রাস্তায় চলাচল করবে। চলমান আন্দোলন মালিক, শ্রমিকদের জন্য কল্যাণহীন।
এদিকে আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বস্তরের পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা, অটোটেম্পো, টেক্সি, টেক্সিকার মালিক সমিতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে সংগঠনটির পক্ষ হতে জানানো হয়েছে। আজ বিকেলে সিলেট বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে এক সভা করে সংগঠনটির পক্ষ হতে এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, সিলেটজুড়ে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশা, অটোটেম্পো, টেক্সি, টেক্সিকার মালিক সমিতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রতিদিনের মতো যাত্রীদের সেবা দিতে সিলেট জেলায় সিএনজি অটোরিকশা, অটোটেম্পো, টেক্সি, টেক্সিকার চলবে।
সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা, অটোটেম্পো, টেক্সি, টেক্সিকার মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি জামিল আহমেদ লিটনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় সভা হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনের সহসভাপতি হানিফ মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমদ, সহসাধারণ সম্পাদক মো. বুলবুল আহমদ, অর্থ সম্পাদক বেলাল আহমদ, সহ–অর্থসম্পাদক মো. ইউসুফ আলী প্রমুখ।
সৌজন্যে : প্রথম আলো