Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০২০
সর্বশেষ সংষ্করণ 2020-11-03T04:56:57Z
গোলাপগঞ্জ

গোলাপগঞ্জের রুস্তমপুরে সুরমার ভাঙনে চোখের সামনেই বিলীন হচ্ছে বসতভিটা

বিজ্ঞাপন


ফাহিম আহমদ:: রাত-দিন তাদের কাছে সমান। তিনবেলা না খেয়ে থাকলেও তাদের কষ্ট নেই। মনের মধ্যে একমাত্র চিন্তা- কখন যে নদীর বুকে শেষ সম্বলটুকু চলে যায়! তাদের রাত কাটে নির্ঘুম। ঘুমালেই যেন শেষ সম্বল ঘরের সঙ্গে ঘুমন্ত অবস্থায় নিজেরাও নদীর বুকে চলে যাবেন! এভাবে কতদিন কেটে গেছে তাদের তার কোনো হিসেব নেই।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের রুস্তমপুর এলাকায় সুরমা নদীর পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দাদের অবস্থা দেখলে যে কারও চোখে পানি চলে আসবে। তাদের এই দুঃখ-দুর্দশা দেখার যেন কেউ নেই। গত কয়েকদিনে প্রায় ১০০ ফুট জায়গা সুরমার বুকে চলে গেছে। সর্বগ্রাসী সুরমা যেন তাদের দিকে অভিশাপ হয়ে ধেয়ে আসছে।

রুস্তমপুর এলাকায় প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস। ইতোমধ্যে সুরমায় বসতভিটা বিলীন হয়ে যাওয়া কিছু সামর্থবান মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। যাদের সামর্থ নেই, তারা নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করছেন। তবে পরাজয় তাদের মানতেই হবে!

রুস্তমপুর এলাকায় সুরমা নদীর পাশে প্রায় ৪শ বছর আগের একটি পুরাতন মসজিদ রয়েছে। মসজিদটি নদীর বুকে চলে যাওয়ার কাছাকাছি। রয়েছে হাতিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির অর্ধেক আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে নদীর বুকে চলে যাবে তা অনেকটাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়। আর বিদ্যালয়ের যে শহিদমিনার, সেটি একেবারেই নদীর পাড়ে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টির সীমানা দেয়াল নদীতে চলে গেছে। এখানে রয়েছে রুস্তমপুর হাফিজিয়া ফুরকানিয়া মাদ্রাসা। মাদ্রাসা, মসজিদ, বিদ্যালয় সবগুলোর একই অবস্থা। মাদ্রাসা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসার সামনের একটি পুকুর গত দুইদিন আগে নদীতে চলে গেছে। চোখের সামনে টুকরো টুকরো করে মাটি ভেঙে নদীর কিনারা বড় হচ্ছে, বসতভিটা হারিয়ে যাচ্ছে।

রুস্তমপুর এলাকার মানুষজন বলছেন, বাঘায় ২০১৩ সালে সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট করতে যে বালু তোলা হয়েছে, সেটি নদীভাঙনের মূল কারণ। সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখান থেকে বালু তোলার সময় এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন নদীভাঙন রোধে এখানে ব্লক স্থাপন করে দেবেন। এরপর সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছিলেন নদীভাঙন রোধে এখানে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি স্কিম তৈরি করে সেটি ঢাকায় পাঠিয়েছিল। কিন্তু এর কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি। এলাকাবাসী বার বার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা এর কোনো সুরাহা করতে পারেননি।

সরেজমিন গতকাল রোববার (১ নভেম্বর) রুস্তমপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীপাড়ের মাটিতে ফাটল ধরেছে। টুকরো টুকরো হয়ে মাটি ভেঙে নদীতে গিয়ে পড়ছে। সেই সাথে বাসিন্দাদের জায়গাও কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় অনেকে বলেন, কথা বলে কী হবে, আমরা অসহায়। আমাদের কোণ সরকার নেই। নির্বাচন এলে শুধু আশ্বাস মেলে। নির্বাচনে জয়লাভ করে তারা উধাও হয়ে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা দৈনিক সিলেট বাণী পত্রিকার সাবেক উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক সজিব আহমদ বলেন, ‘গত কয়েকবছরে এখান থেকে অনেক পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। যাদের সামর্থ নেই তারা অন্যের জমিতে বসবাস করছে। বাকি যারা আছে, কয়েকবছরের মধ্যে নদীভাঙনের শিকার হয়ে তারাও নিঃস্ব হয়ে যাবে।’ তিনি অসহায় মানুষগুলোর শেষ আশ্রয়টুকু বাঁচিয়ে রাখতে নদীভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।

আসরের নামাজ পড়ে ৪০০ বছরের সেই পুরাতন মসজিদের সামনের পুকুরপাড়ে বসেছিলেন সত্তরোর্ধ্ব মুসলে উদ্দিন। অনেকটা হতাশার সুরে তিনি বলেন, ‘হয়তো কয়েকদিনের ভেতরে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি নদীর বুকে চলে যাবে। মসজিদসহ এলাকার মানুষের বসতভিটা বাঁচাতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

বাঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সানা মিয়া বলেন, ‘নদীভাঙন রোধ করার জন্য কয়েকবার সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা আছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের মিটিং হয়েছে। এটি প্রক্রিয়াধীন। একমাস পর সেটি দাখিল করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ