বিজ্ঞাপন
এনামুল কবীর : নিয়মের খাঁড়ায় সিট খালি থাকতেও ভর্তি রোগীরা ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছেন! সিলেট বিভাগে সরকারি চিকিৎসার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমন দৃশ্য নিত্যনৈমিত্তিক। এতে অনেক সময় রোগীর স্বজনদের বিরাগভাজন হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের। এক্ষেত্রে অবশ্য দালালদের ভূমিকাও আছে। তারা সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আদায় করছে টাকা। আর তাই সমালোচনা ঝড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। বিষাক্ত তীরেবিদ্ধ হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায়ই একাধিক সিট খালি পড়ে থাকতে দেখা যায়। অথচ রোগী ও তার স্বজনদের ফ্লোরে, এমনকি বারান্দায় বিছানা পেতে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়। ‘টাকা ছাড়া ওসমানীতে সিট মিলেনা’- এমন কথা চাউর সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলা সদর ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে নিভৃত পল্লীতেও।
সম্প্রতি এমন কিছু ছবি দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। জনগনের টাকায় চলা হাসপাতালের এমন চিত্র সচেতন নাগরিক মনে বেদনার উদ্রেক করে, এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আর এই বেদনা ও তিক্ততা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারী এবং চিহ্নিত দালাল চক্র। তারা টাকার বিনিময়ে সিটের ব্যবস্থা করে দেয়ার নামে প্রায়ই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কাটছে রোগীর স্বজনদের পকেট।
তবে ওসমানীর নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সরকারের নিয়ময়েই সিট খালি থাকলেও রোগীদের ফ্লোরেই থাকতে হবে। কি সেই নিয়ম? সূত্রটির ব্যাখ্যা, শতকরা ৩০ ভাগ সিট খালি রাখতেই হবে। এই ৩০ ভাগ সিট নগদ টাকায় কিনতে হবে রোগী ও তার স্বজনদের। এটিই নিয়ম। সেগুলো বিনে পয়সায় বরাদ্দ দিলে বার্ষিক অডিটে ধরা পড়বে কর্তৃপক্ষ সিটগুলো ভাড়া দিয়েও টাকা জমা করেন নি। ফলে বাধ্য হয়েই সেগুলো সরকার নির্ধারিত ফি তে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিক্রি করতে হয়।
আর ৭০ পার্সেন্ট বিনেপয়সার শর্য্যায় রোগীদের ভর্তির ক্ষেত্রে টাকা নেয়ার নিয়ম না থাকলেও এ হাসপাতালের একটি শক্তিশালী দালাল চক্র আগেই রোগীর স্বজনদের সিট পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকা আদায় করে নিজেরাই সেগুলো আত্মসাত করে। এমনটি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে বদনাম হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
জানা গেছে, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট সিট রয়েছে ৯শ’টি। এরমধ্যে সরকারি নিয়মে পেয়িং বেডের সংখ্যা শতকরা ৩০ ভাগ হিসাবে মোট ২৭০টি। এগুলো হয় রোগীদের কিনতে হবে টাকা দিয়ে, নইলে খালিই থাকবে। যারা কিনতে অক্ষম, তাদের ঠাঁই হয় ফ্লোরে। এমনটাই চলছে বছরের পর বছর।
এনিয়ে আলোচনা- সমালোচনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে হাসপাতালটির উপপরিচালক ডাক্তার হিমাংশু লাল রায় সিলেট প্রতিদিনকে বলেন, লোকে না বুঝে অনেক কিছুই বলেন। কিন্তু সরকারি আইন বা নিয়মেই প্রতিদিন ২৭০টি শয্যা খালি রাখতে হয়, যা সরকার নির্ধারিত ফির বিনিময়ে রোগীদের ভাড়া দেয়া হয়। কিন্তু তবু আমরা অনেক সময় বয়স্ক রোগী বা প্রতিবন্ধিদের সেটা বরাদ্দ দিয়ে দিই মানবিক কারণে। কিন্তু ঢালাওভাবে তা করতে পারিনা। বার্ষিক অডিটেতো আমাদের জবাব দিতে হয়।
আশার কথাও শোনালেন ডাক্তার হিমাংশু লাল। বললেন, আমি চেষ্টার করছি ৩০ পার্সেন্ট সংরক্ষণের নিয়ম পাল্টে সেটিকে ১৫ পার্সেন্টে নিয়ে আসতে। তাহলে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হতো। এ ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।
অতঃপর কি আর করা। টাকা দিয়ে সিট না কিনলে সাধারণ রোগীদের ফ্লোরে অবস্থানই নিয়তি!