বিজ্ঞাপন
জি ভয়েস ডেস্ক: ৮০ বছরের বৃদ্ধা লাল চান বিবি। বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার গ্রামতলা এলাকায়। শ্বাসকষ্ট ও জ্বরসহ কভিডের সবকটি উপসর্গ তার শরীরে উপস্থিত রয়েছে। শুক্রবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। দেখা দেয় অক্সিজেন সংকট। স্বজনরা শনিবার সকালে তাকে নিয়ে প্রথমে বিয়ানীবাজার ও পরে সিলেট নগরীর কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরেও সিট মিলেনি। অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য অ্যাম্বুলেন্সযোগে স্বজনরা একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেছেন। কোথাও পাননি অক্সিজেন সাপোর্ট। শেষ পর্যন্ত সেই বৃদ্ধার ঠাই হয়েছে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে। কিন্তু ভর্তির তিন ঘন্টা পরেই সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সেই বৃদ্ধা।
জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ওয়ার্ডের ১০টি শয্যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত খালি পড়ে ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের সেই শয্যাগুলো প্রায় পূর্ণ হওয়া হয়েছে। দশ শয্যার সব কয়টিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত রোগী। এসব রোগীদের একজন হচ্ছেন লাল চান বিবি। লাল চান বিবিসহ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের ভর্তি হওয়া করোনা রোগীদের দেয়া হচ্ছিল প্রয়োজনীয় সেবা। কিন্তু ভর্তির তিন ঘন্টা পর শনিবার বিকাল ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সেই বৃদ্ধা লাল চান বিবি।
করোনা আক্রান্ত লাল চান বিবি সিলেটের দশটি হাসপাতাল ঘুরে জায়গা না পেয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের মানবিক সহায়তায় ওই হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পান। বড়লেখার এই নারী নানা দুর্ভোগ-ভোগান্তি শেষে অ্যাম্বুলেন্স থেকে বিয়ানীবাজার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন ঘন্টার পর মারা গেছেন জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ইসহাক আজাদ বলেন, ওই বৃদ্ধাসহ ১০ করোনা রোগীকে হাসপাতালের নির্ধারিত আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। লাল চান বিবির শ্বাসকষ্টের সমস্যা প্রকট। তাছাড়া শারীরিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। তাকে আমরা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সাপোর্ট দিইয়ে রেখেছিলাম, কিন্তু তিনি ভর্তির তিন ঘন্টা পর মারা যান।
তিনি আরও বলেন, লাল চান বিবির শারীরিক অবস্থা উন্নত হবার সম্ভবনা কম ছিল। আমরা তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করেও ঠিকিয়ে রাখতে পারিনি। তিনি বলেন, বৃদ্ধার স্বজনরা জানিয়েছেন সিলেটের দশটি হাসপাতালে তাকে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। কিন্তু কোথাও শয্যা না পেয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন তারা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছিল।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, আমাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে দশটি শয্যা রয়েছে। এরই মধ্যে সবগুলো শয্যায় ভর্তিরত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। যদিও আমাদের হাসপাতাল করোনা ডিডেক্টেড নয়, তবুও বৃদ্ধা লাল চান বিবির শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে আমরা ভর্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। কিন্তু তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন বিকালেই মারা গেছেন। এর আগে আমরা তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি মাধ্যপ্রাচ্যস্থ বিয়ানীবাজারবাসীর একটি সামাজিক সংগঠন থেকে তিনটি কনসেনট্রেটর পাওয়ায় করোনা রোগীদের সেবা প্রদানে সহযোগিতা হচ্ছে। আনুসাঙ্গিক চিকিৎসা সরঞ্জাম আরও যুক্ত হলে করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথা জানান তিনি।