Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-10-29T07:55:00Z
সারাদেশ

লাশ নিতে প্রতিবেশীর বাধা, পুকুর দিয়ে পার হলেন স্বজনরা

বিজ্ঞাপন

জি ভয়েস ডেস্ক: মৃত্যুর পর মরদেহ দাফনের ঘটনা নিয়ে এক অমানবিক কাণ্ড ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার তাল শহর গ্রামে। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) সকালে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ভুক্তভোগী এবং স্থানীয়দের মাধ্যমে এ তথ্য জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর পশ্চিত ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়া মনমোহিনী দাস নামে এক বৃদ্ধা মারা যান। কিন্তু পূর্ববিরোধের কারণে ওই বৃদ্ধার মরদেহ শ্মশানে নিয়ে যেতে রাস্তা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। পরে পুকুরের ওপর দিয়ে স্বজনেরা ওই মরদেহ নিয়ে শ্মশানে নিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন। পরে এ সংক্রান্ত কিছু ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানায়, তালশহর পশ্চিম পাড়ার  হরিধন দাসের সঙ্গে আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল প্রতিবেশী পরিমল দাস ও হারাধন দাসের। হরিধন দাসের বাড়ি থেকে বের হতে নিজের কোনো রাস্তা না থাকায় প্রতিবেশী বাড়ির উত্তর ও দক্ষিণ পাশের বাড়িগুলোর ভেতর দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে হরিধন দাসের ৯০ বছর বয়সী মা মনমোহিনী দাস মারা যান। পরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য মরদেহ শ্মশানে নিতে হারাধন দাসের বাড়ির ওপর দিয়ে নিয়ে যেতে অনুমতি চান হরিধন দাসের ছেলে বিজয় দাস। ওই সময় হারাধন দাস তাদের বাড়ির ওপর দিয়ে মরদেহ নিয়ে যেতে নিষেধ করেন। পরে বাধ্য হয়ে পুকুরের পানিতে নেমে এক পাশ দিয়ে মরদেহ শ্মশানে নেওয়া হয়। এ ঘটনাটি মোবাইল ফোনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে, পরে তা ভাইরাল হয়।

এ বিষয়ে হরিধন দাসের ছেলে বিজয় দাস বলেন, হারাধন দাসের বাড়িতে অনুমতি নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার স্ত্রী অনুমতি দেননি, অন্যদিকে রাস্তা বানিয়ে নিতে বলেছেন। পরে আরেক প্রতিবেশী পরিমল দাসের কাছে যাই। তার ছেলেও মরদেহ নিয়ে যেতে নিষেধ করেন। পরে বাধ্য হয়ে পুকুরের পানি ভেঙে পুকুরের ওপর দিয়ে শ্মশানে গেছি। মনে অনেক কষ্ট। মৃত্যুকে নিয়ে এমন ঘটনা কোনো মানুষ ঘটাতে পারে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিন্তু এটাই বাস্তবতা হয়ে গেল।

অভিযুক্ত হারাধন দাস জানান, আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী কার্তিক নিয়ম মাস। এ মাসে আমরা নিরামিষ খেয়ে থাকি। এ সময়ে আমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে যদি কেউ মৃতদেহ নিয়ে গেলে আমাদের হাঁড়ি-পাতিলসহ সবকিছু ফেলে দিতে হবে। নতুন করে এসব কিনতে হবে। তাই আমি নিষেধ করেছি।

তবে আক্ষেপ করে হারাধন দাসের বাড়ির মুরব্বি মুক্তিযোদ্ধা গৌর দাস মাস্টার বলেন, মরদেহ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। জানালে এমন অমানবিক ঘটনা ঘটতে না।

তিনি জানান, মাস তিনেক আগেও তাদের বাড়ির একজন মারা গেছে, তখন মরদেহ নিয়ে যেতে দেওয়া হয়। কোনো সমস্যা হয়নি।

এ বিষয়ে তালশহর (পশ্চিম) ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সামা বলেন, আমাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দুই পরিবারকে নিয়ে বসে ঘটনাটি মীমাংসা করা হয়েছে।

আশুগঞ্জ থানার ওসি আজাদ রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় তা মীমাংসা করা হয়। যারা বাধা দিয়েছিল তারা বলেছে, তারা ভুল করেছে। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে তারা সহযোগিতা করবে।

এ ব্যাপারে জেলা ব্রাহ্মণপুরোহিত কল্যাণ সংঘের সভাপতি হরিশঙ্কর চক্রবর্তী জানান, বিষয়টি অত্যন্ত চরম অমানবিক। এর সঙ্গে নিয়ম মাসের কোনো সম্পর্ক নেই। মৃত্যুর সঙ্গে কারও বিরোধ থাকতে পারে না। ঘটনাটি শুনে ব্যথিত হয়েছি।

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ