Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-10-16T19:00:25Z
সিলেট

নারী-পুরুষ মিলে রমরমা অবৈধ দাদন ব্যবসা, অনেকেই সর্বস্বান্ত

বিজ্ঞাপন

জি ভয়েস ডেস্ক : সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে সুদে-আসলে জমা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।

জানা গেছে, কিছু ভদ্রবেশী লোক অবৈধভাবে পুঁজি গড়ে তুলে দক্ষিণ সুরমার ২৬ নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় দাদন ব্যবসা শুরু করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে আশা-গ্রামীণ ব্যাংক ইত্যাদি এনজিও থেকে স্বল্প পরিমাণ সুদে ঋণ নিয়ে সেই টাকা আবার গরিব-অসহায় মানুষদের কাছে বেশি লাভে দাদন দিচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পাঁচ হাজার টাকা নিলে প্রতি সপ্তাহে দাদন ব্যবসায়ীকে ৮ শ’ টাকা ও ১০ হাজার টাকায় প্রতি সপ্তাহে ১৫ শ’ টাকা সুদ দিতে হয়। চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ ও আসল টাকা দিতে দেরি হলে দাদন ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতিও প্রদর্শন করে থাকেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ীরাও ওই সুদের কারবারিদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেন।

সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দক্ষিণ সুরমার ২৬ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন কলোনি ভাড়া নিয়ে গোপনে, আবার কোথাও প্রকাশ্যেই সুদ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন দাদন ব্যবসায়ীরা। কদমতলি এলাকার শাহরিয়ারের কলোনিতে পিংকি, শুভ মিয়ার কলোনিতে জোছনা, বারেকের কলোনিতে করিম (সেলুনের মালিক), আলী মিয়ার কলোনিতে অবনি, মর্জিনা ও মদিনা, জাহাঙ্গীর মিয়ার কলোনিতে ছালেমা, মিরু মিয়ার কলোরিতে রাছেলের মা, কদমতলী ৩ তলা মসজিদের পেছনে আব্দুল মালেক মিয়ার কলোনিতে নাজিয়া বেগম সুমি, ওসমানের কলোনিতে হাসিনাসহ আরো অনেকেই দাদন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যারা তাদের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার নেয় তারা বিভিন্ন কলোনির গরিব-অসহায় ভাড়াটিয়া। আর গরিব-অসহায় হওয়ায় চড়া হারে নেওয়া সুদের টাকা পরিশোধ করতে পেরে অনেকেই হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। ভয়ে অনেকে ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

রহিম মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, খুব বিপদে পড়ে নাজিয়া বেগম সুমির কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা সুদে ধার নিয়েছিলেন। ৪ সপ্তাহের সুদ ৮ শ টাকা করে দেওয়ার তিনি ৫ম সপ্তাহে সুদের ৮শ টাকা দিতে না পারায় নাজিয়া বেগম সুমি তার ঘরে এসে তার স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করেছে। এতে তার সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে।

উজ্জল নামে এক সিএনজি অটোরিকাশা চালক জানান, পিংকি নামের এক মহিলার নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা সুদে ধার নেন তিনি। কিস্তিতে তিনি ১০ হাজার টাকার উপরে পরিশোধ করেছেন তবুও মূল টাকা রয়ে গেছে।

জানা গেছে, দাদন ব্যবসায়ী হাসিনা, পিংকি, মদিনা, মাহির মা (নাজিয়া বেগম সুমি)-সহ অনেকে সুদে টাকা ধার দিয়ে মানুষকে সর্বস্বান্ত করে টাকা আদায় করে গড়ছেন অবৈধ সম্পত্তির পাহাড়। এদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ ও রিকশাচালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

এ বিষয়ে এসব কলোনির মালিকদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, আমাদের কলোনিতে বিভিন্ন ধরণের মানুষ ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে থাকে। তাদের কেউ দাদন ব্যবসার সাথে জড়িত আছে বলে আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট করে পাওয়া গেলে তাদেরকে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেব।

দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাধারণ ব্যবসায়ী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ব্যাংকে লোন নিতে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদেরকে চেনেন না! তারা চেনেন দাদন ব্যবসায়ীদেরকে। তাই বাধ্য হয়েই চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে টাকা ধার নিয়ে ব্যবসা করতে হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই ব্যবসায়ী বলেন, হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হলেও মান-সম্মানের ভয়ে সুদখোরদের (দাদন ব্যবসায়ী) বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হন না তারা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমাদের জানামতে- কদমতলি বিভিন্ন কলোনির সুদের ব্যবসায়ীরা টাকা ঋণ দিয়ে অনেককেই পথে বসিয়েছেন। অনেকে ঋণের টাকা দিতে পারলেও সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

এদেরকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি ও পদক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

অবৈধ এ ব্যবসা নিয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, সুদ বা দাদন ব্যবসা বেআইনি। কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই সুদের কারবারিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সূত্র: সিলেট ভিউ
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ