Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
সর্বশেষ সংষ্করণ 2022-02-02T04:33:09Z
বিয়ানীবাজার

বিয়ানীবাজারে দলীয় কোন্দলে কোনঠাসা বিএনপি

বিজ্ঞাপন

মিছবাহ উদ্দিন, বিয়ানীবাজার : কোন্দলের দুর্বিপাক থেকে বের হতে পারছেনা বিয়ানীবাজার বিএনপি। গত একযুগেরও বেশী সময় থেকে স্থানীয়ভাবে এই দলটি কোন্দলে কোনঠাসা। এতে তৃণমূলের দলীয় নেতাকর্মীরা যেমন বিভক্ত, বিব্রত তেমনি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনেও নিক্রিয় তারা।

এখানকার বিএনপির কোন্দল নিরসনে কারো কোন উদ্যোগ নেই। এমনকি নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে এমন ভয়ে নিরাপদ দূরত্বে আছেন গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী। ইউনিয়ন-ওয়ার্ড বিএনপির এমন প্রভাব পড়ছে ভোটের মাঠেও। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাত্র দু’টিতে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থীরা।

গত কয়েকদিন থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলার অধীনে বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপির কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তবে প্রতিটি ইউনিয়নেই পাল্টা কমিটি গঠন করছেন অন্যপক্ষ। এমনকি কাউন্সিল করে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নিজেরা নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেছে। বিয়ানীবাজারে বিএনপির এমন ত্রাহি অবস্থায় একপক্ষ দায়ী করছে জেলা বিএনপির নেতাদের। আর অপরপক্ষ অভিযোগ করছে, নেতৃত্বের প্রতিযোগীতায় ঠিকতে না পেরে কোন্দলে ইন্ধন যোগাচ্ছে সুবিধাবাদীমহল।

স্থানীয় বিএনপির এমন সন্দেহ অবিশ্বাসের শুরু বহু বছর পূর্ব থেকে। সর্বশেষ কাউন্সিলে উপজেলায় সভাপতি পদে নজমুল হোসেন পুতুল এবং সাধারণ সম্পাদক পদে এম এ অদুদ রোকন জয়ী হন। মামলা ও রাজনৈতিক চাপে দেশ ছেড়ে আত্মগোপনে পাড়ি জমান এম এ অদুদ রোকন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তৎকালীন সহ-সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক আহমদ দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পুতুল-সিদ্দিক কমিটি দায়িত্বকালে একতরফা দলীয় কার্যক্রম পালন করেন তারা। 

অবশেষে নতুন কমিটি গঠনের জন্য কাউন্সিলকালীন আহবায়ক মনোনীত হন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল খান। তাকে এ পদে মনোনয়ন নিয়ে অনেক দেনদরবার চলে। সেই থেকে সকল কর্মসূচি স্থিমিত হয়ে যায় বিএনপির। তার বাড়ির ড্রয়িংরুমে একের পর এক বৈঠক চলতে থাকে। এতে কোন্দল আর সন্দেহের মাত্রা তড়িৎ বাড়তে থাকে।
সূত্র জানায়, নজরুল খানকে কৌশলে নিজের বলয়ের করে নেন জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আবুল কাহের চৌধুরী শামীম। যা শামীম বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীরা মানতে পারেনি। তারা আশ্রয় নেয় গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করা ফয়সল আহমদ চৌধুরীর ছায়াতলে। কিন্তু কাহের শামীমের প্রভাবে সুবিধা করতে পারছেনা তারা।

গত বছরের নভেম্বরে পৌর বিএনপির কাউন্সিল দু’পক্ষের সংঘর্ষে পন্ড হয়ে যায়। আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে হয়তো পুণরায় পৌর বিএনপির কমিটির তোড়জোড় শুরু হতে পারে বলে জানান সহ-সভাপতি প্রার্থী কবির আহমদ। তিনি বলেন, ভোট শুরু হওয়ার পর কার ইন্ধনে মারামারি হয়েছে, তার তদন্ত এখনো হয়নি। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের যারা এই সংঘর্ষে ইন্ধন দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনে উপজেলার আলীনগর, দুবাগ, শেওলা, মুড়িয়া ও মুল্লাপুর ইউনিয়নে পাল্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নজরুল খান কমিটি অনুমোদন করলেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা পাল্টা কমিটি গঠন করছে। শনিবার উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণের জন্য সভা আহবান করা হলেও তা নিস্ফল হয়। 

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নজরুল খান বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ইউনিয়নে গিয়ে কাউন্সিল করে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এতে অনেকে বাদ পড়ছে। তাই ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে তারা কেউ বিক্ষোভ করছে। এটা কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।
উপজেলা বিএনপি নেতা আখতার হোসেন খান জাহেদ বলেন, পাল্টা কমিটি গঠনকারীদের বিষয়ে দলীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা দাবী জানাবো। তারা যদি সঠিক পথে না আসে তবে দল শৃংখলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার দায়ে ব্যবস্থা নিবে। 

বিয়ানীবাজার বিএনপির অপর নেতা সরওয়ার হোসেন জানান, এখানে দলকে দূর্বল করতে যারা কাজ করছেন, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। উনি জেলা-উপজেলা যে পর্যায়ের নেতা হোন না কেন, আমরা কেন্দ্রের কাছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই।

এদিকে তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যর্থ দলের নেতারা ফেসবুকে একে-অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। যা ঠিক নয়। রাজপথের বদলে ফেসবুক যদি ক্ষোভ-বিক্ষোভের মাধ্যম হয়ে ওঠে, তা দলের জন্য ভালো নয়। গত প্রায় ৩ বছরের বেশী সময় থেকে বিয়ানীবাজার বিএনপি কোন কেন্দ্রীয় কর্মসুচি পালন করেনি। যার প্রভাব পড়েছে গত ইউনিয়ন নির্বাচনে। দলীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান পদে আসন থাকলেও এবার মাত্র দু’জন প্রার্থী জয়লাভ করেন।

সার্বিক বিষয় নিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার জানান, বিয়ানীবাজার বিএনপির সব খবর আমার কাছে আছে। আমি অচিরেই সেখানে গিয়ে সবপক্ষকে নিয়ে বসে এসব কোন্দলের সূরাহা করবো। কমিটি-পাল্টাকমিটি খেলা আর হবেনা।
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ