বিজ্ঞাপন
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট নগরকে বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে অবশেষে শুরু হচ্ছে নগরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদী খননের কাজ। ইতোমধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে কার্যাদেশও দেওয়া হয়েছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে। একটি প্রতিষ্ঠান খননের ড্রেজারসহ সরঞ্জামাদি নিয়ে পৌঁছেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি সপ্তাহেই খননকাজ শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এলকার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুরমা খননেই যে বন্যার হাত থেকে নগরবাসীর মুক্তি মিলবে-এমন প্রত্যশা করা ঠিক নয়।
তাদের মতে, নগরীর ড্রেনেজ সিস্টেমে যে নয়টি বড় খাল আছে, তা যদি খনন ও পরিষ্কার না করা যায় তবে বন্যার সময় অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় পড়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।
২০২১ সালে মে ও জুনে বন্যার নতুন রূপ দেখেছে সিলেট নগরীর মানুষ। সুরমা নদীর পানি কোথাও তীর উপচে আবার কোথাও নগরীর পয়ঃনিষ্কাশনের যে নয়টি বড় খাল রয়েছে, তা বেয়েই পানি ঢুকতে শুরু করে নগরীতে। নগরীর এক-তৃতীয়াংশ এলাকার মানুষ ঘরছাড়া হয়ে পড়ে।
প্রবল এই বন্যার সময় বেশকিছু কারণ খুঁজে বের করেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে প্রধান কারণ ছিল সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পানির ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া, নদীর দুই তীরে শহর রক্ষা বাঁধ না থাকা, নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা নয়টি খাল ময়লা-আবর্জনা আর পাহাড়ি বালিতে ভরাট হয়ে যাওয়া। বন্যার ভয়াবহতায় করণীয় ঠিক করতে গত বছরের ২২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফর করেন।
সে সময় সিলেট সার্কিট হাউজে এসব বিষয়ই তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুই তীরে শহর রক্ষাবাঁধ ও খালগুলোয় স্লুইস গেট নির্মাণের প্রস্তাবনা তুলে ধরে বরাদ্দ চাওয়া হয়। বন্যার পর পেরিয়েছে ৫ মাস। আরও ৫ মাস পর আবারও বন্যার মৌসুম।
কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে বন্যা মোকাবিলার, তা খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, সমস্যাগুলোর মধ্যে যেটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে তা হলো সুরমা নদী খননে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এলকার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম জানান, সুরমা নদী কানাইঘাট থেকে ছাতক পর্যন্ত খননের জন্য তারা আগেই একটি ডিপিপি জমা দিয়েছিলেন। সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তবে গত বন্যার পর শুধু নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা সুরমার ১৮ কিলোমিটার খননের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে কুচাই থেকে লামাকাজি পর্যন্ত কোথাও ২০ ফুট আবার কোথাও ১৫ ফুট খননের ডিজাইনসহ কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ড্রেজার আসছে, চলতি সপ্তাহেই কাজ শুরু হবে।
বন্যা মৌসুমের আগে কাজ শেষ হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্চের মধ্যেই খননকাজ শেষ করার কথা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুরমার খনন শেষ হলে তীর উপচে নগরীতে পানি প্রবেশ হয়তো ঠেকানো যাবে তবে নগরীর অভ্যন্তরের যেসব খাল সুরমার সঙ্গে সংযুক্ত, সেসব খাল খনন ও পরিষ্কার না রাখতে পারলে প্রবল বন্যায় নগরীতে পানি জমে থাকার আশঙ্কা থেকেই যায়।
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাক আহমেদ বলেন, এটা শুধু এক বছরই পরিষ্কার রাখতে হবে এমন না। এটা চলমান প্রক্রিয়া। বন্যার কবল থেকে বাঁচতে প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুমে এসব খাল খনন ও পরিষ্কার রাখতে হবে।
একই বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, সুরমা নদী খননের ফলে বন্যার পানি দ্রুত ভাটির দিকে নামবে ঠিকই তবে বন্যার সময় অতিবৃষ্টি অব্যাহত থাকায় অভ্যন্তরের পানিতেই ভুগতে হবে নগরবাসীকে। তাই নজর দিতে হবে অভ্যন্তরেই।
আর এই অভ্যন্তরীণ খাল খনন আর পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব যাদের, সেই সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে নেই কোনো সুখবর।
তিনি বলেন, কোনো দুর্যোগ এলেই নানা কর্মকান্ডের প্রতিশ্রুতি মেলে; কিন্তু দুর্যোগ সরে গেলেই সব ভুলে যাওয়া আমাদের সংস্কৃতি।