বিজ্ঞাপন
জিভয়েস২৪ ডেস্ক : ১১ অক্টোবর থেকে আজ ১ নভেম্বর প্রায় ২০ দিন হয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে।কিন্তু এখনো লাপাত্তা রয়েছে ঘটনার মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইঁয়া। বলছি সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন আহমদ নিহতের ঘটনার কথা। রায়হান হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ফাঁড়ির বরখাস্ত করা তিন পুলিশ সদস্য ও সন্দেহভাজন হিসেবে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
তারা হলেন, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস, হার“ন উর রশিদ ও আশেক এলাহি। এদের মধ্যে কনস্টেবল হারুন রশীদকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে তোলা হয়। দুই দফা রিমান্ড শেষে কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে জেল-হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
এদিকে গত ২৫ অক্টোবর ছেলের হত্যাকারীদের বিচার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে কাফনের কাপড় বেঁধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অনশন করেন রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম।
অনশনের ছয় ঘণ্টার মাথায় সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আকবরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙান।কিন্ত এখনো ঘটনার মূলহোতা আকবরকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
এছাড়া গত ২৪ অক্টোবর টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন, সিলেটের আলোচিত রায়হান হত্যার ঘটনার প্রধান আসামি এসআই আকবরের অবস্থান শনাক্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা হবে। দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।
কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সবাই আশাবাদী হলেও ৮ দিন পেরিয়ে গেলেও আকবরকে গ্রেফতারে বরাবরের মতো ব্যর্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ঘটনার ২০ দিনেও প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর গ্রেফতার না হওয়ায় জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। আলোচিত এসআই আকবর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোথায় পালালেন? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন রায়হানের পরিবারসহ সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান জানান, তারা এ হত্যাকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছেন। এর সঙ্গে জড়িতরা যাতে কোনোভাবেই পার না পায়- সে জন্য পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা দিনরাত কাজ করছেন। আকবরকে গ্রেফতারেরও জোর চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়। রায়হান সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার বিডিআরের হাবিলদার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে চাকরি করতেন।
এ ঘটনায় গত ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।
১৪ অক্টোবর মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ পিবিআইতে হস্থান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্হল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বোপরি মরদেহ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।
নিহত রায়হানের মরদেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার দিন বিকেলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হার“নুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।