বিজ্ঞাপন
স্টাফ রিপোর্ট: সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের পাঠানগাঁও গ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে গড়ে ওঠা নাহিশা পােলট্রি খামারটি দুই বছরেও উচ্ছেদ করা হয়নি। একের পর এক অভিযােগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছে না এলাকাবাসী। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযােগের তদন্ত করে ২ মাসের মধ্যে খামারটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় ও পরবর্তী সময়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। তারপরও খামার মালিক সেটি সরিয়ে নেননি কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর তা উচ্ছেদে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিমানাকৃত টাকাও জমা দেননি নাহিশা পোল্ট্রি খামারের সত্ত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম।
এই সমস্যা থেকে প্রতিকার পেতে গত রোববার (৬ ডিসেম্বর) এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ করেন ওই এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আহমদ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৩ মার্চ এলাকাবাসীর পক্ষে আশরাফ আহমদ পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে খামারটি উচ্ছেদে অভিযােগ করেন। অভিযােগে ছাড়পত্র ছাড়া ও গ্রামবাসীর আপত্তি উপেক্ষা করে খামারটি তার ঘরের পাশে স্থাপন করা হয় বলে দাবি করেন। একই বছরের ১১ জুন সিলেট জেলা প্রশাসক, খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানগাও গ্রামের শতাধিক ব্যক্তি স্বাক্ষরিত অভিযােগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এলাকাবাসীর পক্ষে ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়। পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতােমধ্যে প্রত্যেকটি বিভাগ ও সংস্থা সরেজমিন তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে। এছাড়াও এ থেকে প্রতিকার পেতে এলাকাবাসী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের কাছেও বিষয়টি লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কেমিষ্ট সাইফুল ইসলাম ও পরিদর্শক হারুন অর রশিদ অভিযােগের কয়েক মাস পর সরেজমিন তদন্ত করে সত্যতা পান। পরে তাদের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ আগষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত পত্রে খামার মালিক নজরুল ইসলামকে দুই মাসের মধ্যে খামার বন্ধ বা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তারপরও সেটি না সরানােয় নতুন পরিচালক কয়েক মাস আগে খামার মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও আবার দুই মাসের মধ্যে খামার সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে দু'মাস অতিবাহিত হয়ে দীর্ঘদিন চলে গেলেও এই পোল্ট্রি খামারটি রহস্যজনক ভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর কোন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা।
এলকাবাসী অভিযােগ করেছেন, নানা ছলচাতুরী করে নাহিশা পােলট্রি খামারের মালিক ঐ এলাকার বড়বন্দ গ্রামের নজরুল ইসলাম সেটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু গ্রামের ভেতর পােলট্রি ফার্ম গড়ে তােলায় দেড় বছর ধরে দুর্গন্ধের শিকার হচ্ছেন স্কুল শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা। বিশেষ করে খামারের পাশের বাসিন্দারা রয়েছেন অনেক কষ্টে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, অবৈধভাবে গড়ে উঠা পাঠানগাঁও গ্রামের পোল্ট্রি খামারে পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিন পরিদর্শন করে জরিমানা করেছে। কিন্তু পিরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানার টাকাতো উদ্ধার করতে পারেইনি বরং খামারের মালিক তাদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খামারটি এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন, বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। অতিসত্বর এই খামারটি বন্ধ করে এলাকাবাসীর পরিবেশ রক্ষার করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানান।
এব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ্ শাহেদা আখতার বলেন, পাঠানগাঁও গ্রামের পরিবেশ বিনষ্ট করা খামারটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা বিভিন্ন অধিদপ্তরে বেলার পক্ষ থেকে অভিযোগ করেছি। এর পরিপেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর এই খামারটি সরেজমিন পরিদর্শন করে খামারটি বন্ধের নির্দেশ ও বন্ধ না করলে পরবর্তী ৫০হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু এখনো খামারটি বন্ধ করতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশের এখতিয়ার আছে যে চাইলে এই খামারটি তারা উচ্ছেদ করতে পারে। কিন্তু অজানা কারণে তারা কেন পরিবেশ ধ্বংসকারী এই খামারটির বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যাচ্ছে আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বর্তমান পরিচালক মােহাম্মদ এমরান হােসেন জানান, খামারটি সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। জরিমানা আদায় না করলে বা খামারটি উচ্ছেদ না করলে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।