Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-02-16T21:03:31Z
গোলাপগঞ্জলিড নিউজ

গোলাপগঞ্জের বুধবারীবাজার ইউনিয়নে ভুলে ভরা স্মার্ট কার্ড বিতরণ

বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বুধবারীবাজার ইউনিয়নে শেষ হয়েছে স্মার্ট কার্ড বিতরণী কার্যক্রম। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে একটানা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়ে তা শেষ হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি। এ চারদিন ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডবাসীর হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দিয়েছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীলরা।

তবে ইউনিয়নবাসী স্মার্ট কার্ড হাতে পেয়ে খুশি এলাকাবাসী খুশি হওয়ার পরিবর্তে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় প্রত্যেকটির স্মার্ট কার্ডে রয়েছে ব্যাপক ভুল। কারোও কারোও নিজ নামের ভুল, কারোও পিতার নামের ভুল। সবচেয়ে বেশি ভুল রয়েছে গ্রামের নাম নিয়ে। ভুল থেকে বাদ যায়নি পোস্ট অফিসের নাম কিংবা পোস্ট অফিসের নাম্বার পর্যন্ত। একটি দেশের জাতীয় স্মার্ট কার্ডে কিভাবে এতো ভুল থাকতে পারে তা’ই এখন জনমনে প্রশ্ন!

বুধবারীবাজার ইউনিয়নে রয়েছে ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১৬টি গ্রাম। জাতীয় স্মার্ট কার্ডে এ গ্রামগুলোর নামকে অত্যন্ত বিকৃতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামের বানানে রয়েছে মারাত্মক ভুল। যা নিয়ে পুরো ইউনিয়নবাসী পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

বুধবারীবাজার ইউপির চেয়ারম্যান ৬নং ওয়ার্ডের কালিডহর গ্রামের বাসিন্দা মস্তাব উদ্দিন কামাল জানান, আমার ছেলের স্মার্ট কার্ডে গ্রামের নাম কালিডহর-এর স্থলে দেয়া হয়েছে ‘কালি দাহার’। যা মারাত্মক ভুল। এছাড়াও আমার স্ত্রীর নাম বাংলাতে সঠিক থাকলেও ভুল রয়েছে ইংরেজিতে।

একইভাবে অভিযোগ করেছেন কালিডহর গ্রামের শিপু ইসলাম। তিনি জানান, আমার আগের ন্যাশনাল আইডি কার্ডে সবকিছু সঠিক থাকলেও বর্তমানে দেয়া স্মার্ট কার্ডে গ্রামের নামের বানানে রয়েছে ‘কালি দাহার’।

ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের চন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম, তারেক আহমদ ও সুহেল আহমদ জানিয়েছেন, আমাদের পূর্ববর্তী জাতীয় পরিচয়পত্রে আমাদের গ্রামের নাম সঠিক ছিলো। কিন্তু স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রে গ্রামের নাম চন্দরপুর এর বদলে ‘চান্দরপুর’ দেয়া হয়েছে।

ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কটলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সামিদ আহমদ জানিয়েছেন, আমাদের গ্রামের নাম কটলিপাড়া হলেও স্মার্ট কার্ডে ভুলভাবে দেয়া হয়েছে ‘কাটালি পাড়া’।

২নং ওয়ার্ডের আওই গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক সোহেল আহমদ জানান, গ্রামের সঠিক নাম আওই হলেও নতুন ভোটার স্মার্ট কার্ডে এসেছে ‘আহাই’।

৩নং ওয়ার্ডের বহরগ্রামের বাসিন্দা রিপন আহমদ জানান, বিপুল সংখ্যক কার্ডে বহরগ্রাম-এর স্থলে দেয়া হয়েছে ‘বাহারগ্রাম’।

৫নং ওয়ার্ড বাগিরঘাট গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান তাদের কারোও কারোও কার্ডে গ্রাম এবং পোস্ট অফিস দেয়া হয়েছে চন্দরপুর। যা মারাত্মক ভুল।

৬নং ওয়ার্ডের বনগ্রামের বাসিন্দা মুরাদ আহমদ জানান, তাদের পোস্ট অফিস কোড ৩১৬৫ হলেও স্মার্ট কার্ডে দেয়া হয়েছে ৩১৭৬।

৭নং ওয়ার্ড বানিগাজী গ্রামের বাসিন্দা ইমরান আহমদ ও খসরুজ্জামান জানান, গ্রামের নাম বানিগাজী হলেও স্মার্ট কার্ডে দেয়া হয়েছে ‘বনি গাজী’!

৮নং ওয়ার্ড চন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল হক, মুহিব রহমান, রুহুল আমীন জানান, আমাদের গ্রামের অসংখ্য মানুষের কার্ডে ব্যাপক ভুল রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের বিকৃত নাম লক্ষণীয়।

৯নং ওয়ার্ডের লামাচন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা জুনেদুর রহমান খান জানান, আমাদের পোস্ট অফিস চন্দরপুর হলেও স্মার্ট কার্ডে দেয়া হয়েছে আছিরগঞ্জ বাজার।

এছাড়াও পুরো ইউনিয়নের প্রায় ৬০শতাংশ নাগরিকদের স্মার্ট কার্ডে এমন ভিন্ন ভিন্ন ভুল দৃশ্যমান রয়েছে। যা বিভিন্ন প্রয়োজনে ইউনিয়নবাসীকে মারাত্মক বিপাকে ফেলবে। এমন ভুল তথ্য সম্বলিত জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে কোনভাবেই নাগরিক সেবা পাওয়া সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন সচেতন মহল। বিশেষ করে পাসপোর্ট তৈরি কিংবা ব্যাংকিং কার্যক্রম-সহ অসংখ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন তারা।

সাংবাদিক সালমান কাদের জানান, ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেক ওয়ার্ডের অসংখ্য মানুষজনের স্মার্ট কার্ডে তথ্যগত ভুলের পাশাপাশি রয়েছে বানানগত ব্যাপক ভুল। হাজার হাজার ইউনিয়নবাসীর জাতীয় পরিচয়পত্রের এমন দশা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। জাতীয় একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে কিভাবে এতো এতো ভুল থাকতে পারে তা বোধগম্য হচ্ছে না।

এদিকে বুধবারীবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মস্তাব উদ্দিন কামাল জানান, আমার নিজের ঘরেই মারাত্মক ভুল প্রতীয়মান। আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানাবো। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টির দ্রুত সুরাহা করার জন্য আমি গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের প্রতি অনুরোধ করবো।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইদুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, স্মার্ট কার্ডে ভুল থাকার কথা নয়, আর ভুল থাকলে তা সংশোধনের প্রক্রিয়া রয়েছে। যাদের কার্ডে ভুল রয়েছে তাদেরকে সংশোধনের আবেদন করার জন্য তিনি বলেন।

কিন্তু ভুল তথ্য কিংবা ভুল বানান সম্বলিত কার্ড নিয়ে বিপাকে রয়েছেন পুরো ইউনিয়নের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ। এতো সংখ্যক স্মার্ট কার্ডের সংশোধন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময়ের ভোগান্তি লাগবে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি এ কর্মকর্তা।

এমন উদ্ভট পরিস্থিতিতে জনমনে কেবল একটাই প্রশ্ন, পূর্ববর্তী জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সঠিক থাকলেও স্মার্ট কার্ডে তথ্যের বা বানানের ভুল কিভাবে আসে?
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ