Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-08-11T17:38:12Z
গোলাপগঞ্জ

ফোন পেলেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটছেন গোলাপগঞ্জের তরুণরা

বিজ্ঞাপন

ফাহিম আহমদ : তারা মানবতার ফেরিওয়ালা। তারা সময়ে-অসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভালবাসে। তাদের হাটতে-বসতে একটাই ধ্যান অসহায় মানুষের সেবা করা। টাকা দিয়ে হোক কিংবা নিজেদের মেধা-শ্রম দিয়ে হোক। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান কোন কিছুই তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনা। পথটা যদিও শতশত কিলোমিটার হয়। হেঁটে কিংবা গাড়িতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। খাবারের জন্য হোক, রক্তের জন্য হোক, চিকিৎসা সহায়তার জন্য হোক, রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য হোক। সব সময় মানুষের পাশে এগিয়ে আসেন গোলাপগঞ্জের এক ঝাঁক মানবতার ফেরিওয়ালারা। যদিও তারা নিজেদের মানবতার ফেরিওয়ালা উপাধি দিতে নাকোচ। এটা মানুষ হিসেবে তাদের বড় কর্তব্য বলে মনে করেন তারা।

করোনার এ মহামারিতে অক্সিজেন খুবই প্রয়োজন। অক্সিজেনের অভাবে চোখের সামনে অনেক মানুষের মৃত্যু দেখতে হয়েছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাত শতাধিক ছাড়িয়েছে। সুস্থতার চেয়ে আক্রান্তের তুলনা বেশি। হাসপাতালে- ক্লিনিকে করোনা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়া অনেকের ঠাই মিলছে না। এ অবস্থায় অক্সিজেনের জন্য হাহাকার করছেন রোগীর আত্মীয় স্বজনেরা। যাদের টাকা আছে তারা কোন ভাবে কুলিয়ে নিচ্ছেন। আর যারা অসহায় বিপাকে পড়ছেন তারা। অসহায় হোক কিংবা ধনী হোক করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আলাদা আলাদা কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে উপজেলায় যাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন তাদের বাড়িতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে ছুটছেন তারা। অক্সিজেন প্রয়োজন, কল পেলেই ছুটছেন তারা রোগীর বাড়িতে।

গত কয়েকদিন থেকে উপজেলার বেশ পরিচিত সামাজিক সংগঠন রংধনু ফাউন্ডেশন, গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাব, আজ থেকে গোলাপগঞ্জ স্টুডেন্ট ফোরামের দায়িত্বশীল, সদস্যরা অক্সিজেন নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়াও না জানা অনেক সংগঠন এগিয়ে এসেছে এ মানবসেবায়। সংগঠনের সদস্যদের চাঁদায়, বিভিন্ন সামাজিক ব্যক্তিদের অর্থায়নে এসব অক্সিজেন মানুষকে দেওয়া হচ্ছে।

মানবতার ফেরিওয়ালাদের এমন কর্মকান্ডে খুশি উপজেলার মানুষ। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলেননি কেউ। মন ভরে দোয়া করছেন তাদের জন্য। সর্বমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন তারা।

রংধনু ফাউন্ডেশনের সভাপতি তাজুল আহমদ রাসেল বলেন, 'রংধনু ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মানুষের সেবার জন্য। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যেকোন সময়ে মানুষের পাশে রয়েছে সংগঠনটি। অক্সিজেনের অভাবে মানুষের মৃত্যু, হাহাকার দেখেছি। অক্সিজেনের অভাবে যাতে মানুষের মৃত্যু না হয় এজন্য উপজেলায় প্রথমেই আমরার অক্সিজেনের ব্যবস্থা করি। কেউ কল দিলে বাড়ি বাড়ি ছুটে যাচ্ছি। উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৭ জন রোগীকে আমরা অক্সিজেন দিতে পেরেছি। এ ধারা অব্যহত থাকবে বলে তিনি জানান।'

গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি ক্লাবের সভাপতি মান্না আহমদ বলেন, 'আমরা গোলাপগঞ্জ চ্যারিটি আর্তপীড়িত মানুষের সেবায় নিয়োজিত৷প্রতিনিয়ত সংগঠনের দায়িত্বশীল, সদস্যদের পরিশ্রম অসহায় মানুষের জন্য। এখন পর্যন্ত আমরা ১৬ জন রোগীকে অক্সিজেন দিতে পেরেছি। প্রতিদিন কত কল আসে হিসেব নেই। আমরা চাইলেও সবার চাহিদা মিটাতে পারছি না। এজন্য আমাদের মত সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।'

গোলাপগঞ্জ স্টুডেন্ট ফোরামের সভাপতি সাইফুর রহমান বলেন, 'আমরা আজ থেকে অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম শুরু করেছি। ধীরে ধীরে আমাদের কার্যক্রম আরও বড় পরিসরে অব্যহত রাখব।'

গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন বলেন, 'করোনার এই মহামারি সময়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের রোগীদের অক্সিজেন সেবা দেয়া প্রশংসনীয়। এজন্য তিনি যারাই এ ধরনের মানবিক কর্মকান্ডে জড়িত তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান। সেই সাথে রোগীর অবস্থা বুঝে পরিমাণ অনুযায়ী অক্সিজেন দেওয়ার জন্য তিনি স্বেচ্ছাসেবীদের অনুরোধ করেন।'

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ