Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-10-28T20:44:43Z
সিলেট

সিলেটে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নির্বিচারে গাছ কেটে মসজিদে দান !

বিজ্ঞাপন
সিলেটের শাহজালাল উপশহর এলাকায় উন্নয়ন কাজের মধ্যে বিভিন্ন গলিতে গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। এই এলাকায় আরও বহু গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি এই ছবিটি তোলা হয়েছে।

ডেস্ক রিপোর্ট : উন্নয়নের নামে সিলেটের শাহজালাল উপশহর এলাকায় এই মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে অন্তত ২০০টি গাছ কাটা হয়েছে।

বন বিভাগের ছাড়পত্র ছাড়াই উপশহর এলাকার বিভিন্ন গলিতে গাছগুলো কাটা হয়েছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিলাম না করেই তা বিক্রি করেছেন। এই বেআইনি কাজকে বৈধতা দিতে কাউন্সিলর গাছ বিক্রির টাকা মসজিদে দান করার কথা বলছেন।

এছাড়াও শাহজালাল উপশহর এলাকায় সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রধান সড়কের পাশের শ'খানেক গাছ কাটতে বন বিভাগের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

গত ২০ অক্টোবর সিলেটের পরিবেশকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে রক্ষা পায় নগরীর চৌহাট্টা এলাকার প্রায় শতবর্ষী একটি গাছ। সে গাছটিও সড়ক সম্প্রসারণের নামে বনবিভাগের অনুমতি না নিয়েও কাটা শুরু করেছিল সিসিক। গতমাসে নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য এরকম পাঁচটি গাছ কাটা পড়েছে।

১৯৭৬ সালে সিলেট নগরীর বর্ধিত অংশ হিসেবে শাহজালাল উপশহর এলাকাকে আবাসিক এলাকা হিসেবে উন্নয়ন শুরু করে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এই এলাকা ১০টি ব্লকে বিভক্ত।

প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই এলাকার সড়ক সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে সিসিক। এই অজুহাতে আশপাশের বিভিন্ন গলিতেও গাছ কাটা হয়েছে।

সম্প্রতি উপশহর এলাকা পরিদর্শন করে এই প্রতিবেদক বহু কাটা গাছের ডালপালা দেখতে পান। এই গাছগুলোর কাণ্ড ইতোমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসীরা জানান, গাছ দিনের বেলা কাটা হলেও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে রাতের আঁধারে।

এই এলাকার বাসিন্দা এবং সিলেট জেলা বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কমিটির সদস্য আফতাব চৌধুরী বলেন, '৯০ এর দশকে এলাকার অনেক মানুষের মতো আমিও এলাকায় ব্যাপক বৃক্ষরোপণ করেছি। এই গাছগুলোর একেকটির দাম এখন লাখ টাকার মতো। উন্নয়নের নামে বেআইনিভাবে এসব গাছ কেটে ফেলা হলো।'

১৯৯৮ সালে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর পদক পাওয়া এই বৃক্ষপ্রেমী বলেন, 'গাছগুলো যেমন বেআইনিভাবে কাটা হয়েছে, তেমনি বিধি না মেনে নিলাম ছাড়াই গোপনে তা বিক্রি করে কিছু টাকা মসজিদে দান হিসেবে দেখিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর।'

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিসিকের ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ সেলিম অনুমোদন ছাড়াই গাছ কাটা এবং বিধি না মেনে বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, 'যত গাছ কাটা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তত গাছ কাটা হয়নি। ২০ থেকে ২৫টি গাছ কাটা হয়েছে। আর এগুলোর মূল্য যতটা বলা হচ্ছে ততটাও না। যে বেশি টাকা দিতে রাজি হয়েছে তার কাছে গাছ বিক্রি করে দিয়েছি। খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা স্থানীয় মসজিদে দান করা হয়েছে। বিষয়টি বিধিবহির্ভূত হলেও অনৈতিক নয়।'

কাউন্সিলর আরও বলেন, 'উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য গাছ কাটার অনুমতি চাইলে বনবিভাগ অনুমতি দিতে অনেক দেরি করে। এতে প্রকল্প বিলম্বিত হয়। তাই উন্নয়ন কাজ দ্রুত শুরু করতে অনুমতি ছাড়াই গাছ কাটতে হয়েছে।'

যেকোনো প্রকল্পে গাছ কাটতে হলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করতে হয় এবং বনবিভাগ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়।

সে অনুযায়ী উপশহর এলাকার প্রধান সড়কের গাছ কাটার জন্য গত ১৭ অক্টোবর বনবিভাগের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছে সিসিক। বনবিভাগ ইতোমধ্যে প্রধান সড়কে বিভিন্ন গাছ কাটার জন্য লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা শুরু করেছে।

সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, 'প্রধান সড়কের গাছ কাটার জন্য অনুমতি চেয়েছে সিসিক। কিন্তু গলির ভিতরে যেসব গাছ কাটা হয়েছে, তার জন্য কোন অনুমতি চাওয়া হয়নি এবং অনুমতি ছাড়াই তা কেটেছে বলে আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পেয়েছি।'

তবে প্রচলিত বন আইনে গাছ কেটে ফেলার পর ব্যবস্থা নেওয়ার বিধি না থাকায় বনবিভাগ ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলে জানান এ বন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'শুধু পরিবহনের সময় এবং করাতকলে অনুমতি ছাড়া কাটা গাছ ধরা পড়ে, তখনই কেবল ব্যবস্থা নেওয়া যায়।'

সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, 'এভাবে অনুমতি না নিয়ে গাছ কাটার বিষয়টি হতাশাজনক—বিশেষ করে যখন আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব দিচ্ছি। উন্নয়নের প্রয়োজনে গাছ কাটা পড়ছে বলে আমরা বৃক্ষরোপণের বড় উদ্যোগ নিয়েছি। যারা নিয়ম ভেঙে গাছ কাটছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।'

পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির  বলেন, 'এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য কেউ কারও বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয় না। বৃক্ষনিধনে এই চক্রটি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, 'আমাদের প্রতিবাদের পরও কোনো পরিবর্তন দেখছি না। মেয়র ক্রমেই বৃক্ষখেকো মেয়রে পরিণত হচ্ছেন, যা খুবই হতাশাজনক। অবাধ বৃক্ষনিধন এখনই রুখতে হবে।'

তথ্য ও ছবি : দ্য ডেইলি স্টার
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ