বিজ্ঞাপন
জাহিদ উদ্দিন: গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী আর নেই (ইন্না-লিল্লাহ... রাজিউন)। শনিবার রাত ১২টা ২০মিনিটের সময় সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর।
বহুবিধ প্রতিভার অধিকারী, মানবকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ, উচ্চ শিক্ষার অনুরাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী সিলেট জেলার অন্তর্ভুক্ত গোলাপগঞ্জ উপজেলার রফিপুর গ্রামে ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুহিবুর রহমান চৌধুরী এবং মাতা হাফিজা চৌধুরী।
তিনি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে এলএলবি পাস করে সিলেট জেলা বারে আইন পেশায় যােগদান করেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। স্বৈরাচার আইয়ুববিরােধী গণ-আন্দোলনে তিনি
সক্রিয় ছিলেন।
ইকবাল আহমদ চৌধুরী প্রথম দফায় ২০০৯ থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ও দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গােলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিলেট জেলা ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগে যােগদান করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছিলেন অগ্রসৈনিক। দীর্ঘদিন থেকে
তিনি গােলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এনইইউবি)-এর চেয়ারম্যানের (বোর্ড অব ট্রাস্টিজ) দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৫০-৬০ এর দশকে প্রগতিশীল ছাত্রনেতাদের মধ্যে অন্যতমদের একজন জনাব ইকবাল আহমদ চৌধুরী। ১৯৬২ সালে আইয়ুব শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৪-এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৬৯-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সারির নেতা হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন । অপার সংগ্রামী পথ ধরে ঢাকার কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতৃবৃন্দের বন্ধুত্বে-ভালোবাসায় সিক্ত হোন।
এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী ইচ্ছে করলেই ষাটের দশকে রাজধানী ঢাকা শহরে চাকচিক্যময় জীবন সাজাতে পারতেন, সেই সুযোগ ও সম্ভাবনা তাঁর সামনে পূর্ণমাত্রায় ছিল। কিন্তু লালিত স্বপ্ন ও প্রতিজ্ঞার প্রতি সম্মান দেখাতেই নিজের জীবন নিবেদিত করেছেন সমাজপ্রগতি ও মানুষের কল্যাণে। অবদান রেখে চলেছেন বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও মানবকল্যাণমূলক কাজে।
সিলেটে এমন কোনো মানবকল্যাণমুখী সামাজিক প্রতিষ্ঠান নেই যার সঙ্গে তিনি শীর্ষ পর্যায়ে জড়িত নন। ১৯৯৮ সালে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নের প্রয়াসে নিজেকে নিবেদিত করেন ‘নর্থ ইস্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তা ও পরিচালক হিসেবে, যেখানে স্বল্প খরচে ছাত্র-ছাত্রীরা এমবিবিএস পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ স্বল্প মূল্যে পাচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষানুরাগী ও মধ্যবিত্তের উচ্চশিক্ষা অর্জনের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী ২০১২ সালে ‘নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এনইইউবি) প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং দরিদ্র, মেধাবী শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ।