Advertisement (Custom)

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত: বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১
সর্বশেষ সংষ্করণ 2021-08-25T09:36:28Z

মৌলভীবাজারে বাঁশ ও জীবন্ত গাছকে খুঁটি বানিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ !

বিজ্ঞাপন
জীবন্ত গাছকে খুঁটি বানিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে লাইন টেনে গ্রাহকদের বাড়িতে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুতের সংযোগ। ছবিটি কাশেমনগর এলাকা থেকে সোমবার তোলা। ছবি : সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর

ডেস্ক রিপোর্ট : গাছ, বাঁশ ও জীবন্ত গাছকে খুঁটি বানানো হয়েছে। এসব খুঁটি দিয়েই বিদ্যুতের তার টেনে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব খুঁটির কোনোটা ভেঙে বিদ্যুতের তার মাটি ছুঁইছুঁই। অনিরাপদ এই লাইনের কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা এলাকাবাসীর। বিদ্যুৎপ্রবাহ আইন ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) নীতিমালা পরিপন্থী বিদ্যুৎ লাইনের এমন অব্যবস্থাপনার চিত্র মৌলভীবাজারের বড়লেখায়। পাশাপাশি ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল, লো ভোল্টেজের ভোগান্তিতে আছেন এলাকার দুইশতাধিক গ্রাহক।

ঝুঁকিপূর্ণ লাইন সংস্কার, লো ভোল্টেজ ও ভুতুড়ে বিলের সমাধান এবং লাইন সংস্কারের নামে অর্থ নেওয়ার অভিযোগে বিউবো কুলাউড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে গত ১৬ আগস্ট একটি লিখিত আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। অনুলিপি দেওয়া হয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক, বিউবো সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী, মৌলভীবাজার কার্যালয়ের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী ও বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।

আবেদন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের কাশেমনগর, পুটাডহর, গ্রামে বিউবোর আওতায় দুইশতাধিক গ্রাহক আছেন। প্রায় ১৫ বছর আগে ওই এলাকায় এলটি বেয়ার (এক ফেইজ কভার ছাড়া তার) দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছে। শুরুর দিকে কিছু পাকা খুঁটি থাকলেও বেশিরভাগই ছিল গাছ ও বাঁশের। একসময় পাকা খুঁটিগুলো ভেঙে গেলে বিউবোর লোকজন জীবন্ত গাছ, গাছ ও বাঁশের খুঁটিতে সঞ্চালন লাইন টেনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। এসব তার কোথাও ভূমি থেকে ৭-৮ ফুট উপর দিয়ে টানা। অনেকেই অসাবধানতাবশত গাছ ও বাঁশের খুঁটি ছুঁয়ে বিদ্যুতের শক খেয়েছেন। প্রায় দেড়দশকেও লাইন সংস্কার হয়নি। এছাড়া লো ভোল্টেজে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। ফ্রিজ, মটর নষ্ট হয়েছে অনেকের। এরমধ্যেই নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এরকম অবস্থা দোহালিয়া, গজভাগসহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রামে। অন্যদিকে অভিযোগ আছে, লাইন সংস্কারের নামে প্রায় দুবছর আগে বিউবোর লাইনম্যান পরিচয়দানকারী রবিউল আলম বিউবো কর্মকর্তাদের নামে ১ লাখ টাকার চুক্তি করে এলাকাবাসী থেকে ৪৫ হাজার টাকা নেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশ ও সুপারিগাছ, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি করা হয়েছে। কোথাও জীবন্ত গাছকে খুঁটি করা হয়েছে। এসব খুঁটি দিয়ে এলটি বেয়ার (এক ফেইজ খোলা লাইন) টেনে গ্রামে ও বাড়িতে প্রবেশ করানো হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ। নিউট্রাল লাইন ব্যবহার করা হয়েছে বাড়ির সীমানা প্রাচীর, শৌচাগার ও পিলারের রডের সাথে। কোথাও তার গাছের ওপর ঝুলে পড়েছে। কোথাও খেতের ফসল ছুঁয়েছে।

কাশেমনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মেইন লাইন মাথার উপরে। লাইন ঝুললে আমরা বাঁশ দিয়ে উপরে তুলে দেই। কয়েকদিন আগে আমার গাড়িতে মেইন লাইন লেগে আরথিং করে। কোনোমতে বেঁচেছি। লাইনে কোনো কাজ হয় না। লো ভোল্টেজের কষ্ট আছি। বিদ্যুৎ নেওয়ার শুরু থেকে এই অবস্থা। তারা রিডিং না দেখেই ইচ্ছেমতো বিল দেয়। না দিলে হয়রানি করে।’

এদিকে রবিউল ইসলাম ৪৫ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি বিউবোর কর্মী না। স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান। গ্রাহকরা টাকা লাইন সংস্কারের ঠিকাদারকে দিয়েছেন। এ সময় আমি শুধু উপস্থিত ছিলাম।’

দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বলেন, ‘প্রধান সমস্যা হচ্ছে লো ভোল্টেজ। একটি পরিবারে সব লাইট বন্ধ করেও কোনোরকম একটি ফ্যান চালানো যায় না। ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে এলাকাবাসী লাইন এনেছে। বিউবো দায়িত্ব নেওয়ার পরেও ট্রান্সফরমার চেঞ্জ করে না। গ্রাহকদের নিজেদের টাকায় ট্রান্সফরমার কিনে আনলে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। লাইনটা ঝুঁকিপূর্ণ এটাও সংস্কার করা হচ্ছে না।’

বিউবো কুলাউড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী উসমান গণি বলেন, ‘এলাকাবাসীর লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। গাছ ও বাঁশ দিয়ে জোর করে তো কারো বাড়িতে লাইন দেওয়া হয়নি। তখন স্থানীয় নেতাদের জোরাজুরি, তদবিরে লাইন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা ঠিক গাছ ও বাঁশের খুঁটি এবং এক লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ দেওয়ার কোনো বিধান নাই। তবে এখন নতুন করে এভাবে লাইন দেওয়া হচ্ছে না। একটা প্রজেক্ট আসছে। সমস্যার সমাধান হবে। কিছু পরিবর্তন কাজ শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রবিউল নামে আমাদের কোনো কর্মী নাই। বিউবোর নামে যদি কেউ চাঁদাবাজি করে আমরা কি করব।’

তথ্য সূত্রে : সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় সংবাদ